ফাইল চিত্র।
গ্যাংটকে বুধবার দুপুর থেকেই বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। আকাশে মেঘ থাকলেও সন্ধে পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। আপাতত এটাই একটু আশার ইঙ্গিত। বাকি সবই অনিশ্চয়তার মধ্যে। আমরা আটকে রয়েছি গ্যাংটকের হোটেলে। কবে নামতে পারব, জানি না।
এ দিনই আমাদের ফেরার কথা ছিল এনজেপি হয়ে। রাতের ট্রেনে। খুব সকালে উঠে আমাদের পর্যটন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওরা জানাল, এনজেপি পর্যন্ত পুরো রাস্তাই অনিশ্চিত। অবিরাম বৃষ্টির জেরে কোথায় যে ধস নেমেছে রাতে, তা বলা মুশকিল। তাই ওরা কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। অগত্যা হোটেলের ঘরে বসে ট্রেনের টিকিট বাতিল করলাম। তার পর থেকেই একটা প্রবল অনিশ্চয়তা বোধ পাথরের মতো চেপে বসল
মনে। হয়তো সাময়িক। কিন্তু অস্বস্তিটা অন্য। আমার ছেলে হায়দরাবাদে ওর কর্মস্থলে ফিরবে। ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। এর পর দেরি হলে আবার নতুন করে ছুটি নিতে হবে। কী যে হবে, জানি না।
মঙ্গলবার গ্যাংটকে এসে সন্ধের দিকে বেরিয়েছিলাম। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছিল। দেখলাম রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দু’একটি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে দেখাও হয়ে গেল। ওঁদেরও একই অবস্থা, আটকে গিয়েছেন। একজন জানালেন, তাঁর হোটেলের ভাড়া অনেক বেশি। এখানে কত দিন আটকে থাকতে হবে, জানা নেই। তাই পকেট বাঁচাতে সস্তার হোটেল খুঁজতে বেরিয়েছেন। আমাদেরও প্রায় একই অবস্থা। আরও দু’দিন থাকতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে।
বুধবার সকালে এটিএমে লাইনে কলকাতার কয়েক জনকে দেখলাম। ওঁরাও ট্রেনের টিকিট বাতিল করেছেন। শিলিগুড়ি থেকে বাসে ফেরার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু শিলিগুড়ি কী ভাবে পৌঁছব! আমার এক বন্ধু কলকাতা থেকে জানাল, গ্যাংটকে কোথাও একটা শিবির হয়েছে, যেখান থেকে দার্জিলিং প্রশাসন সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকদের ঘুরপথে এনজেপি বা শিলিগুড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করছে। যদিও এ ব্যাপারে এখানে তেমন কোনও খোঁজ পাইনি।
সন্ধেয় বেরিয়ে মনে হল, কিছুটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে শহরটা। বৃষ্টি থেমেছে দুপুরেই। আমাদের পর্যটন সংস্থার দু’একজন গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হল। ওঁরা জানালেন, এনজেপি ফেরার মূল রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে ঘুরপথে দার্জিলিং দিয়ে ফেরার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সেই দীর্ঘ রাস্তাও যে কাল সকালে ঠিকঠাক থাকবে, তার নিশ্চয়তা কী? আর আমাদের সঙ্গে শিশু আছে দু’টি, মহিলারা রয়েছেন। রাস্তায় কয়েক ঘণ্টার জন্য ধসে আটকে গেলে তো বিপদ আরও বাড়বে! এর সদুত্তর ওঁরা দিতে পারেননি।