শুনশান: বকখালির সৈকত। নিজস্ব চিত্র
প্রায় চার মাস ধরে লকডাউন চলছে। তার আগে-পরে দু’দুটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বুলবুল ও আমপান আছড়ে পড়েছে। তাতে বকখালির সমুদ্রে সৈকতে প্রায় সমস্ত ছোট-বড় দোকান ভেঙে তছনছ হয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা একেবারেই কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য শিকেয়। কয়েক মাস ধরে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্দশায় পড়েছেন সমুদ্র সৈকতের ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতের মরসুম ছাড়াও প্রায় সারা বছর ধরে বকখালির সমুদ্রে সৈকতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন। বছরখানেক আগে পর্যন্ত পর্যটকদের বকখালি যাওয়ার পথে হাতানিয়া দোহানিয়া নদী পারাপারের ভোগান্তিতে পড়তে হত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বার্জে করে গাড়ি নারায়ণপুর থেকে নামখানায় নদী পারাপার করে সেখান থেকে পৌঁছত বকখালিতে। নদীর উপরে সেতু হয়ে যাওয়ায় এখন সরাসরি গাড়ি নিয়ে পৌঁছনো যায় বকখালিতে।
সেতু হওয়ার পরে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন বকখালির ছোট-বড় ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকেরা। নতুন সেতু আরও বেশি পর্যটক টানবে, এই আশা ছিল। কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।
প্রায় ৬০টি হোটেল আছে এখানে। সৈকত-লাগোয়া প্রায় ১৭০টি নানা রকম দোকান আছে কেনাকাটা, খাবারের। বুলবুলের সময়ে সমুদ্র লাগোয়া সমস্ত দোকান ঝড়ে তছনছ হয়ে যায়। তা সারিয়ে নিলেও ফের আমপানে সব শেষ। ধংসের চেহারা নিয়েছে বকখালির ঝাউয়ের ঘন জঙ্গলও।
বকখালির সৈকত ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের দাবি, ঘর ও দোকান আমপানে ভাঙার পরে সরকারি সাহায্যে মেলেনি। পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীচির অভিযোগ আছে। রেশনের চাল ছাড়া সরকারি কোনও সাহায্যে না পাওয়ায় প্রায় অনাহারে দিন কাটছে বহু পরিবারের। ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েত, প্রশাসনের নানা মহলে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওা হয়নি বলে অভিযোগ। লকডাউনে পর্যটকেরা খুবই কম আসায় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ।
পর্যটকেরা বাইরে থেকে আসুন, তা আবার চাইছেনও না কিছু মানুষ। বকখালি মেন রোড ব্যবসায়ী সমিতি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ছড়ায়নি এখানে। কলকাতা থেকে নিয়মিত ভূতল পরিবহণের গাড়িতে কিছু কিছু পর্যটক আসছেন। তাঁরা নিয়মবিধি না মানায় করোনা ছড়াতে পারে।
ক’দিন আগেই লক্ষ্মীপুর ও অমরাবতী গ্রামের মহিলারা পর্যটকদের গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভও দেখান। মেন রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিশ্বেশ্বর প্রামাণিকের অভিযোগ, পর্যটকেরা যাঁরা আসছেন, তাঁরা প্রায় কেউই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এলাকায় বহিরগতদের থেকে করোনা ছড়াতে পারে। সমস্ত হোটেল ও ভূতল বাস চলাচল বন্ধ রাখার দাবি নিয়ে পঞ্চায়েত, প্রশানসকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফ্রেজারগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম প্রামাণিক বলেন, ‘‘বাস চলাচল ও হোটেল বন্ধের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরেই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’ আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দোকান ভেঙে গেলে ক্ষতিপূরণের সরকারি ঘোষণা হয়নি। তবে যতটা পারি সরকারি অন্য সাহায্য করছি।’’ দুর্নীতির বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভুল করে যে সমস্ত নাম ক্ষতিপূরণের তালিকায় ঢুকেছিল, তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৫৫ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, হোটেল ও বাস চলাচলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।