রুখে দাঁড়াতে চাইছেন টোটো চালকেরা। বলছেন, ‘‘ভিক্ষে চাইলে দিতে পারি। কিন্তু আর কোনও অনুদান দেবো না!’’
ডায়মন্ড হারবার শহরে টোটো ইউনিয়নের গাড়ি পিছু দৈনিক ১০ টাকা ‘অনুদান’ নেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে এ ভাবেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন টোটো চালকেরা। এর পরে কিছুটা হলেও পিছু হঠেছেন ইউনিয়নের নেতারা। রবিবার পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডে টুল এবং টেবিল নিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের টোটো চালকদের থেকে টাকা তোলা চললেও সোমবার সকাল থেকে ওই দৃশ্যের দেখা মেলেনি।
ইমারতি ব্যবসা, বালি খাদানের সিন্ডিকেট দেখতে অভ্যস্ত এই রাজ্য। সেই খাতায় নতুন সংযোজন হয়েছে এই ‘টোটো সিন্ডিকেট।’ ডায়মন্ড হারবার শহরে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত টোটো ইউনিয়নের নাম ক্ষুদ্র পরিবহণ যান সংগঠন (ই-রিকশা)। এই শহরে কেউ টোটো কিনলে তাঁকে এই ইউনিয়নে নাম লেখাতেই হয় বলে জানাচ্ছেন টোটো চালকদের অনেকেই। প্রথমে দিতে হয় ৩৬০ টাকা। তারপরে দৈনিক ১০ টাকা। এই হিসেবে টোটো থেকে ‘অনুদান’ বাবদ মাসে কমবেশি ৬৬ হাজার টাকা আদায় হয়। কিন্তু সেই টাকার কোনও হিসেব নেই বলেই অভিযোগ টোটোচালকদের একাংশ। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীও তাঁদের বক্তব্য সমর্থন করে।
শনিবার রাতে এই নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি হয়। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক টোটো চালক সোমবার বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে টোটো কিনে সংসার চালাচ্ছি। তারপরেও কেন টাকা দিতে হবে? এত দিন ভয়ে চুপ করে থাকতাম। কিন্তু আর নয়। কোনও অনুদান দেবো না ইউনিয়নকে।’’ এরপরে হুমকি এলে পাল্টা প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টোটো চালকদের একাংশ।
টোটো চালকদের এই মনোভাব আঁচ করতে পেরেই সুর নরম করেছে আইএনটিটিইউসির জেলা নেতৃত্ব। সোমবার সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি সন্তোষ মজুমদার বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই ইউনিয়ন আমাদের স্বীকৃত নয়।’’ কিন্তু যে বিলের বিনিময়ে অনুদান তোলা হয়, সেখানে আইএনটিটিইউসি-র নাম লেখা রয়েছে। সে কথা বললে সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘ভোটের ফল বেরোনোর পরে ব্যবস্থা নেব।’’
রবিবার ওই ইউনিয়নের নেতারা দাবি করেছিলেন, টোটো চালকদের থেকে প্রাপ্ত দৈনিক অনুদান দিয়ে তাঁরা ‘তহবিল’ তৈরি করেছেন। সেই টাকায় নারায়ণপুর, রত্নেশ্বরপুর, ডায়মন্ড হারবার, ও পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে রুট পরিচালনার জন্য ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকায় ৪ জন কর্মী নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় কোনও টোটো চালক দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁকে ইউনিয়ন থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। কিন্তু সোমবার এলাকায় গেলে টোটো চালকেরা অনেকেই মৃদু হেসে বললেন, ‘‘কোনও কর্মী নেওয়া হয়নি। ও সব বানানো গল্প। পুরো টাকাটাই ইউনিয়নের কিছু নেতার পকেটে যায়।’’
জেলার সিটু নেতা শমীক লাহিড়ির কটাক্ষ, ‘‘সাধারণ মানুষের থেকে তোলা নিয়েই চলছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। প্রশাসনের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
জেলা পুলিশ এক কর্তা জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।