আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
দোটানায় পড়ে কী কী পদক্ষেপ করতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়? এমনই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে আমলা মহলে। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, স্বাধীন ভারতে এমন ঘটনা নজিরবিহীন! তাই তাঁরা এই পরিস্থিতির প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখবেন। আবার কোনও কোনও প্রাক্তন আমলা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশকেই 'বেআইনি' বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ আবার বলছেন, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে একজন দক্ষ আধিকারিককে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। প্রাক্তন সচিব পর্যায়ের আধিকারিক জহর সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবকে দিল্লি ডেকে পাঠানোর যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। কারণ, কোনও রাজ্যের মতামত ছাড়া সেই রাজ্যের আধিকারিকদের ডেকে পাঠানো যায় না। তাই রাজ্য সরকার তাঁকে না ছাড়লে মুখ্যসচিব রাজ্য সরকারের সঙ্গেই কাজ করে যেতে হবে। কারণ, তিনি ৩ মাসের এক্সটেনশন পেয়েছেন। ওই বেআইনি অর্ডার মানার কোনও সম্ভাবনাই আমি দেখছি না।’’
বাম জমানায় তৎকালীন সচিব পর্যায়ের আধিকারিক বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ডেপুটেশনে কর্মসূত্রে দিল্লি গিয়েছিলেন। জানা যায়, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রথমে তাঁকে ছাড়তে না চাইলেও, পরে বাসুদেবের দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন তিনিই। সে ক্ষেত্রে বাসুদেব নিজেই দিল্লিতে ডেপুটেশেনে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুখ্যসচিব আলাপন তেমন কোনও আবেদন করেননি বলেই জানা গিয়েছে। বাসুদেব অবশ্য ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুখ্যসচিবেরও দায়িত্ব সামলেছিলেন। নিজের লিখিত বিবৃতিতে বাসুদেব জানিয়েছেন, প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বর্তমান মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কিংবা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী এমন পরিস্থিতিকে 'নজিরবিহীন' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা আগে কখনও কোনও রাজ্যে ঘটেনি। দেশের সর্বস্তরের সচিব পর্যায়ের আমলারা বিষয়টির উপর নজর রাখছেন।’’
তবে আলাপন কেন্দ্রীয় সরকারি পদে যোগ না দিলে, তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আনুমোদনটি খারিজ করে দিতে পারে কেন্দ্র। আইনের ক্ষমতাবলে এমনটা করতেই পারেন তাঁরা। এক প্রাক্তন আমলার কথায়, মুখ্যসচিবের মেয়াদবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেমন বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, তেমনই রাজ্য সরকার ও মুখ্যসচিব, উভয়েই সিদ্ধান্ত বাতিলের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থও হতে পারেন। পাশাপাশি, আরটিআই-এ আবেদন করেও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে যে কেউ বিস্তারিত তথ্য চাইতেই পারেন।