বাড়ছে ক্ষোভ, রাজ্যের বিরুদ্ধে চড়া সুর ত্বহার

রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভিতরে শাসকের বিরুদ্ধে স্বর ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দিন দশেক আগে মৌলালি যুব কেন্দ্রে তৃণমূলের অনুমোদন প্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের এক সভায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। সেই মৌলালি যুব কেন্দ্রেই বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা শিক্ষকদের একাংশ ফের শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভিতরে শাসকের বিরুদ্ধে স্বর ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

Advertisement

দিন দশেক আগে মৌলালি যুব কেন্দ্রে তৃণমূলের অনুমোদন প্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের এক সভায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।
সেই মৌলালি যুব কেন্দ্রেই বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা শিক্ষকদের একাংশ ফের শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন।

এ দিন অবশ্য তাঁদের ক্ষোভের কারণ, কথা দিয়েও রাজ্যের তিন মন্ত্রীর মৌলালির ওই সভায় উপস্থিত না হওয়া। ওই সভার আয়োজন করেছিল মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি। বিরক্ত শিক্ষকরা সভায় হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, ‘‘২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। মন্ত্রীদের মনে রাখা দরকার, সংখ্যালঘুরা সরকার গড়তে না পারলেও সরকার বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।’’

Advertisement

কেবল ওই শিক্ষকরাই নন, এ দিন ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকিরও ক্ষোভ, ‘‘এই সরকার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের নানা দাবি করলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কথা দিয়েও অনুষ্ঠানে হাজির হলেন না মন্ত্রীরা। বোঝাই যাচ্ছে, এই সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে কতটা দরদী! এখন সময় এসেছে, দাবি আদায় করতে মুসলিমদের আইন অমান্য, পথ অবরোধ আন্দোলনে যেতে হবে।’’ সেই আন্দোলনের সামনের সারিতে তিনি নিজে থাকবেন বলেও সংখ্যালঘু ওই ধর্মীয় নেতা জানান।

ওই সভায় আমন্ত্রিত মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। সভায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরমন্ত্রী। সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার শরীর খুব খারাপ ছিল। হাসপাতালে গিয়েছিলাম।’’ বেচারামবাবুকে অবশ্য বারবার টেলিফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএস-এরও জবাব মেলেনি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একদা তহ্বার সুসম্পর্ক থাকলেও ইদানীং তৃণমূলের ‘ব্রাত্য’ নেতা মুকুল রায় থেকে শুরু করে বিরোধী সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরীরাও তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। এমনকী, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলমের শেষকৃত্যেও সামিল হয়েছিলেন ত্বহা। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সরকারের বিরুদ্ধে তহ্বার তোপ তাৎপর্যপূর্ণ। যার প্রেক্ষিতে বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের সরকার সম্পর্কে সংখ্যালঘুদের মোহভঙ্গ হচ্ছে।

এ দিন মৌলালির সভায় তহ্বা আরও অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে অনুমোদন সংক্রান্ত ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে গেলেও তিনি তাতে সই করেননি। তার পরে দু’বছর কেটে গিয়েছে। বস্তুত, ওই সভায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিদের বক্তব্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারি প্রচারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের আর্থিক সহায়তা পায় না, (আনএডেড) এমন মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতিনিধি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে স্বীকৃতি মিলেছে মাত্র ২৩৭টির। ৯০০টি আনএডেড মাদ্রাসার পরিদর্শন হয়ে গেলেও অনুমোদন মিলছে না।’’

সংগঠনের অন্যতম সদস্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন জানান, রাজ্যে মুসলিম ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মাত্র ২% মাদ্রাসায় পড়ে। ফলে এখানে ১০ হাজার মাদ্রাসা করার কোনও প্রয়োজন নেই এবং এত মাদ্রাসা করার মতো জায়গাও নেই। তাঁর মতে, ‘‘সরকার এক হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন দিলেই সমস্যা মিটে যাবে।’’ সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলির শূন্যপদে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ এবং অনুমোদিত মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে পর্ষদের আওতায় আনার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদে নির্বাচনের দাবিতে পর্ষদ ঘেরাও করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement