এসএসকেএম হাসপাতাল
এসএসকেএমে রোগীদের ভিড়। ফাইল চিত্র
সকাল হতেই জেলা থেকে আসা রোগীরা লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়েন। বহির্বিভাগের সামনে ভিড় থিকথিক করে। কার্ডিওলজি কিংবা নিউরো সার্জারির মতো বিভাগে অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণের অপেক্ষায় রোগী ও পরিজনেরা মাসের পর মাস ঘুরতে থাকেন। এসএসকেএম হাসপাতালে রোগীর চাপ নিয়ে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষস্তরে। তাই চাপ কমাতে এ বার রোগী ভাগ করে দেওয়া হবে শহরের তিনটি সরকারি হাসপাতালে। যদিও প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, এর জেরে চাপ বিশেষ কমবে না। বরং দালাল-চক্র আরও সক্রিয় হবে। যার জেরে ভোগান্তি বাড়বে রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি নির্দেশ জারি হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল, বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস (বিআইএন), রামঋকদাস হরলালকা হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের অধীনে থাকবে। নাম পরিবর্তনও করা হবে এই তিন হাসপাতালের। প্রতিটির নাম হবে ‘এসএসকেএম অ্যানেক্স বিল্ডিং’। তার নীচে পুরনো নাম উল্লেখ করা থাকবে। তবে এই তিনটি হাসপাতালের রোগী পরিষেবা থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ, সবটাই তদারকি করবেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বছর দেড়েক আগেই এই তিনটি হাসপাতালের কাজকর্ম এসএসকেএমের অধীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়। সেই মতো শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের পুনর্নিমাণের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এসএসকেএম হাসপাতালের চাপ কমাতেই এই পরিকল্পনা। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে বক্ষরোগ, অস্থি, ফিজিক্যাল মেডিসিনের মতো বিভাগে উন্নত পরিষেবার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। বিআইএন-এ স্নায়ুর অস্ত্রোপচার ও নিউরো মেডিসিনের মতো বিভাগ ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা চলছে। স্ট্রোক পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে রামঋক হাসপাতালে। তবে প্রতিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানোর টিকিট দেওয়া হবে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে। তিনটি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
প্রশাসনের একাংশ অবশ্য মনে করছে, এর জেরে রোগী ভোগান্তি বা়ড়বে। তার উপরে সক্রিয় হতে পারে দালাল-চক্র। বহির্বিভাগের টিকিট থেকে ভর্তি, সবটাই হবে এসএসকেএমের অধীনে। ফলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও বেশি মানুষের থেকে টাকা নেওয়ার চক্র সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারা এই আশঙ্কা মানতে নারাজ। তাঁরা জানান, হাসপাতালে দালাল-চক্রের পাশাপাশি যে কোনও ধরনের প্রতারণা রুখতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তার দিকটি জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘ এসএসকেএমের অধীনে তিনটি হাসপাতাল রেখে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণের কাজ এ বার শুরু হবে। তার জন্য রোগীদের ভোগান্তি বাড়ার সংশয় থাকবে কেন? রোগীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করতেই এই ব্যবস্থা হচ্ছে।’’