টানাটানির সংসার এখন। তাই শুধু দলীয় কর্মীদের লেভি তিন মাস অন্তর আদায়ে জোর দেওয়াই নয়। দল চালানোর সামগ্রিক খরচই কমিয়ে আনছে সিপিএম।
ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার পরে এক দিকে সিপিএমের সংগঠনের ভিত দুর্বল হয়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে অর্থের জোগানেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খরচে রাশ টানার বার্তা দিতে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সম্প্রতি দিল্লিতে দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিমানের বদলে ট্রেনে চেপে। রাজ্য নেতৃত্বের নিদান মেনে জেলায় জেলায় দলীয় নেতারা এখন কোথাও পুল-কারের ব্যবস্থা করেছেন, কোথাও বা খাবারের মেনুতে শুধুই সবজি ভাতের ব্যবস্থা থাকছে।
খরচে কাটছাঁট করার উদাহরণ হিসাবে তুলে আনা যেতে পারে খাস কলকাতার জেলা কমিটির কথা। ওই জেলায় লেভি বাবদ মাসিক আয় হওয়ার কথা ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সময়মতো তা আদায় না হওয়ায় বিপুল খরচের চাপ সামাল দিতে হয়। কলকাতায় জেলা কমিটির নিয়ম অনুয়ায়ী, সংগৃহীত অর্থ পুরোটাই কেন্দ্রীয় ভাবে জেলা দফতরে জমা পড়ে। সেই অর্থ জেলা কমিটি থেকেই আবার কেন্দ্রীয় ভাবে খরচ করা হয়। লোকাল, জোনাল কমিটির অফিসের ভাড়া, টেলিফোনের খরচ থেকে বিদ্যুতের বিল— সবই মেটানো হয় সেই অর্থ থেকে। ক্ষমতায় না থাকায় অতিরিক্ত আয়ের পথও এখন বন্ধ।
এই কলকাতা জেলা কার্যালয়ে গাড়ির সংখ্যা ১৬টি। এখনও গাড়ির সংখ্যা কমানো না হলেও নেতাদের বলা হয়েছে একটু সমঝে চলতে। এত দিন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতি সদস্যের জন্য একটি করে গাড়ি বরাদ্দ থাকত। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন সদস্য এখন দলের গাড়ি ব্যবহার করেন না। বাকিদের বলা হয়েছে, যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে যেন গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আগে সারা দিনে কত কিলোমিটার গাড়ি চলল, তার হিসেব তেমন ভাবে রাখা হতো না। জ্বালানির খরচ কমাতে দলের তরফে এখন বলা হয়েছে, কত কিলোমিটার গাড়ি চলল, তার ‘লগ বুক’ যথাযথ ভাবে রাখতে হবে। কলকাতা জেলা কমিটির পুরনো কিছু গাড়ি মেরামত করা হচ্ছে। কারণ, লড়ঝড়ে গাড়ি বেশি তেল খাচ্ছিল! রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে দলের প্রচারের ক্ষেত্রেও। হোর্ডিং-ফেস্টুনের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি ভরসা করা হচ্ছে।
একই ভাবে বাঁকুড়া জেলা কমিটির ৫টি গাড়ি এখন কমে দাঁড়িয়েছে একটিতে। জেলা সম্পাদক যে গাড়িটি পান, সেটিই এখন দলের ভরসা। জেলা দফতরে সর্বক্ষণের কর্মী এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের খাদ্য তালিকায় এখন মাছ বন্ধ! ভাতের সঙ্গে ডাল এবং একটি সবজি রাখা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের ৯টি গাড়ি এখন কমে হয়েছে ৫টি। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের আসা-যাওয়ার জন্য পুল কারের ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ একটি গাড়িতে একাধিক নেতাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রতিদিন জেলা কার্যালয়ের কমিউনে দু’বেলা ৫০ জন খেতেন। তাতে প্রতি মাসে বিপুল খরচ হতো। লাগাম টানতে ঠিক হয়েছে, শুধু সর্বক্ষণের কর্মী ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরাই খাবেন।
এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘আয় এখন সীমাবদ্ধ। তাই জেলাগুলিকে তাদের নিজস্ব রোজগার বুঝে খরচ করার জন্য বলা হয়েছে। বেহিসেবি কিছু চলবে না।’’ সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যে জেলাগুলি ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। রাজ্য নেতারা জেলায় জেলায় নির্দেশ দিয়েছেন, প্রচারের জন্য অতিরিক্ত খরচ যেন না হয়। একই দিনে একাধিক বৈঠক সেরে নিতে হবে। টেলিফোন এবং গাড়ির জ্বালানির খরচ কমাতে হবে।