দামে লাগামই লক্ষ্য, জরুরি পণ্য আলু-পেঁয়াজ

কেন্দ্রের প্রস্তাবে প্রথম প্রথম দোলাচলে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই আলু-পেঁয়াজের দামে রাশ টানা যাচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর বাতলানো পথেই আলু-পেঁয়াজকে ‘অত্যাবশ্যক পণ্য’ ঘোষণা করল মমতার সরকার। উদ্দেশ্য, মজুতদারিতে লাগাম পরিয়ে ওই দু’টি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

কেন্দ্রের প্রস্তাবে প্রথম প্রথম দোলাচলে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই আলু-পেঁয়াজের দামে রাশ টানা যাচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর বাতলানো পথেই আলু-পেঁয়াজকে ‘অত্যাবশ্যক পণ্য’ ঘোষণা করল মমতার সরকার। উদ্দেশ্য, মজুতদারিতে লাগাম পরিয়ে ওই দু’টি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা।

Advertisement

জরুরি কিছু পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখার জন্য অত্যাবশ্যক পণ্য আইন চালু হয় ১৯৫৫ সালে। ওই আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত পণ্যগুলির মজুতদারি হলে পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ কালোবাজারি ও মজুতদারির অভিযোগে মামলা করতে পারে। শুধু তালিকাভুক্ত পণ্যের মজুতদারি নিয়ে অভিযান চালানোর ক্ষমতা থাকে পুলিশের হাতে। রাজ্যে এত দিন আলু-পেঁয়াজ সেই তালিকায় না-থাকায় পুলিশ ওই দু’টি পণ্যের মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারত না। এ বার পারবে।

আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব অজিতকুমার শেঠ। মাসখানেক আগে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছিল, অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যগুলিরও সমান ভূমিকা রয়েছে। তাই আলু-পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সব্জির কালোবাজারি ও মজুতদারি ঠেকাতে রাজ্যকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্র। প্রাথমিক দ্বিধা কাটিয়ে মমতার সরকার কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে নিয়েছে। আলু-পেঁয়াজকে অত্যাবশ্যক পণ্য ঘোষণা করে মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সরকার।

Advertisement

পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীরা সর্বাধিক কত আলু-পেঁয়াজ রাখতে পারবেন, ৩১ জুলাই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পোট্যাটো অ্যান্ড ওনিয়ন (স্টোরেজ কন্ট্রোল) অর্ডার-২০১৪’ জারি করে খাদ্যসচিব অনিল বর্মা তা জানিয়ে দিয়েছেন। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এখন থেকে কোনও পাইকারি ব্যবসায়ী ২০০০ কুইন্টালের বেশি আলু এবং ৫০০ কুইন্টালের বেশি পেঁয়াজ মজুত করে রাখতে পারবেন না। খুচরো ব্যবসায়ীরা গুদাম বা দোকানে সর্বাধিক ৫০ কুইন্টাল আলু এবং ২০ কুইন্টাল পেঁয়াজ রাখতে পারবেন। এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কালোবাজারি ও মজুতদারির অভিযোগে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথমে আপত্তি জানিয়েও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মমতা শেষ পর্যন্ত মোদীর পথই বেছে নিলেন কেন?

সরকারি কর্তাদের কেউ কেউ জানান, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর গড়া বিশেষ টাস্ক ফোর্স এই ব্যাপারে প্রথমে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। মজুতদারি নিয়ন্ত্রণের বদলে তারা আলু-পেঁয়াজের উপরে কৃষি বিপণন দফতরের বসানো লেভি তুলে নিয়েছে। কিন্তু তাতে বাজারে ওই দু’টি পণ্যের দামে বিশেষ হেরফের হয়নি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক ফের মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যগুলিকে উদ্যোগী হতে বলে। দাম নিয়ন্ত্রিত না-হলে তার দায় যে রাজ্যগুলির উপরে পড়বে, সেটাও জানিয়ে দেয় দিল্লি।

তার পরেই কিছুটা নড়েচড়ে বসে রাজ্য। কৃষি দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, দাম নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দিল্লি তা জানতে চাইলে বলার কিছুই ছিল না। আইনে আলু-পেঁয়াজের কথা উল্লেখ করে অন্তত মুখরক্ষার ব্যবস্থা করা হল। পুলিশকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য যদি সত্যিই মজুতদারি ঠেকাতে পারে, তা হলে মানুষ সুফল পেতে পারেন।

ভিন্ রাজ্যে বা দেশের বাইরে আলু চলে যাওয়াটাও দাম বাড়ার একটা কারণ বলে বাজার-বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মুখ্যমন্ত্রীও তা-ই মনে করেন। কিন্তু সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা থেকে অন্যত্র আলু পাঠাতে বা অন্য রাজ্য থেকে পেঁয়াজ আনার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধের কথা নেই। অথচ মমতা বরাবরই এ রাজ্য থেকে অন্যত্র আলু পাঠানোর বিরোধিতা করে এসেছেন। তাঁর যুক্তি, এ রাজ্যে যে-পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, তাতে অন্যত্র চলে না-গেলে কখনওই তার দাম বাড়ার কথা নয়। শুধু ভিন্ রাজ্য নয়, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, ভুটানেও যথেচ্ছ আলু চলে যাওয়ার ফলে পর্যাপ্ত আলু ফলিয়েও বাংলায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জন্যই কৃষি বিপণন দফতর আলু পাচার রুখতে বিভিন্ন জাতীয় সড়কে নজরদারি শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আলু রফতানি বা পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে কিছুই বলা নেই।

কেন নেই?

খাদ্য দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো বন্ধ করাই যায়। কিন্তু ভিন্ রাজ্য থেকে যদি পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়, এ রাজ্যের চলবে কী করে? বাংলার আলু না-পেলে নাসিকের পেঁয়াজ না-ও পাঠাতে পারে মহারাষ্ট্র। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এ রাজ্যকে পুরোপুরি আমদানির উপরে নির্ভর করতে হয়। সেই জন্য আলু-পেঁয়াজের মজুতের উপরেই শুধু নজর রাখা হচ্ছে। যাতে দাম যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে থাকে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থাটাও ব্যতিক্রমী বলে মনে করছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের একাংশের মতে, এখন উদার অর্থনীতির বাজারে সব ধরনের পণ্যের কারবারেই নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। অতীতে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের আওতায় অনেক সামগ্রী ছিল। এখন এ রাজ্যে কেবল ভোজ্য তেল, তৈলবীজ এবং ডালই ওই আইনের তালিকায় রয়েছে। এ বার তাতে যুক্ত হল আলু আর পেঁয়াজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement