পঞ্চায়েত ভোটের প্রতীক বিতরণে কৌশলী তৃণমূল নেতৃত্ব। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা থেকে ফিরহাদ হাকিম যাচ্ছেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে। হাওড়ার পুলক রায় উত্তর ২৪ পরগনায়। হুগলি যাবেন সাংসদ শান্তনু সেন। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে এ ভাবেই ‘ঠিকানা’ বদলাচ্ছে তৃণমূলের নেতানেত্রীদের। এর নেপথ্যে রয়েছে ভোটের টিকিট বিলি ঘিরে ক্ষোভ, বিক্ষোভ বা গোষ্টীকোন্দলের আশঙ্কা।
মনোনয়ন দাখিলের তালিকায় এখনও পর্যন্ত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অথচ প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে প্রচুর নাম জমা পড়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। এক জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলে, বিরূপ হতে পারেন অন্য গোষ্ঠীর নেতারা। ফলে দলীয় কোন্দল শুরু হতে পারে। এই পরিস্থিতি সামলাতে জেলা নেতাদের হিমসিম খেতে হয়েছে অতীতে অনেক বারই। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে ভিন্জেলার নেতাদের সামনে রাখছে তৃণমূল। জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যানদের নিজের জেলায় প্রতীক বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
ভিন্জেলার নেতাদের দিয়ে ভোটের প্রতীক বিতরণের কৌশল অবশ্য এই প্রথম নয় শাসকদলে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের পুরসভার নির্বাচনের প্রতীক বণ্টনের ক্ষেত্রেও একই কৌশল নিয়েছিল তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে প্রার্থিপদ নিয়ে কোন্দল এবং দ্বন্দ্বের ঘটনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই পঞ্চায়েত ভোটের সময় একই পথ অবলম্বন করছেন তাঁরা।
কিন্তু পুরভোটের তুলনায় পঞ্চায়েত ভোটের কাজ যে অনেক বেশি কঠিন, তা-ও মানছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সময় মাত্র কয়েক হাজার বুথের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামাল দিতে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু এ বার নির্বাচন হচ্ছে ৬১ হাজারেরও বেশি বুথে। প্রতীক বিতরণের দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েক জন নেতাকে সংশ্লিষ্ট জেলায় থেকে গিয়ে ভোট পরিচালনারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে জেলায় পৌঁছে দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
ভোটার সংখ্যা এবং আসনের নিরিখে সব থেকে বড় জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রতীক বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তিনি হুগলির নেতা। কোচবিহার জেলার প্রতীক বিতরণ করবেন প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। বাঁকুড়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীকে। হাওড়া জেলায় এই দায়িত্ব পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার (সদর) তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। জলপাইগুড়ি জেলায় প্রতীক বিতরণ করবেন বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে।