তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস আলি। —ফাইল চিত্র।
ফের পঞ্চায়েত ভোটে দলে মোটা টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে। দলের প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে পদাধিকারী নির্বাচন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকার এই লেনদেনের অভিযোগে এ বার সরব হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস আলি। শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় স্তরে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সম্প্রতি দলের অন্দরে টাকার লেনদেনের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এ বার একই অভিযোগ করেছেন ওই জেলারই ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস। তিনি শুক্রবার বলেন, ‘‘আগের রাতে ঠিক করে দেওয়া কর্মাধ্যক্ষের নাম সকালে বদলে গেল! অভিযোগ পেলাম, টাকার বিনিময়ে এ সব হচ্ছে। সভাপতি, সহকারী সভাপতির নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, ১০-১৫ লক্ষ টাকা করে নিয়ে এ সব করা হয়েছে। এ সব আমি নেতৃত্বের নজরে এনেছি। সর্বোচ্চ স্তরেও জানাব।’’ প্রবীণ বিধায়কের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সততার প্রতীক’। কিন্তু এই রকম অভিযোগ ভূরি ভূরি উঠছে।
জেলায় তাঁর কাজকর্ম নিয়ে নানা রকমের অভিযোগ থাকায় বিধায়ক হুমায়ুন অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। আর ইদ্রিসের অভিযোগ নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব এখনই কোনও স্পষ্ট অবস্থান জানাননি। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘উনি (ইদ্রিস) আমাদের দলের সিনিয়র নেতা। তিনি কী বলেছেন, আমি জানি না। ওঁর সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নেব।’’
বিরোধীরা অবশ্য শাসক দলের অন্দরের এই বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছাড়তে নারাজ। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এটাই তো তৃণমূলে থাকার প্রাথমিক শর্ত। সাধারণ মানুষ এই কথা জানেন। অথচ উনি এত দিন তৃণমূল করছেন, উনি এই কথা জানেন না! তৃণমূল কর্মীরা যে কথা প্রকাশ্যে বলেন, উনি এখন এই কথা বলছেন? আসলে শতাংশের হিসেব নিয়ে গোলমাল হয়েছে। তাই বলে ফেলেছেন!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপির দৌলতে বাংলার রাজনীতিতে এখন ‘ফেলো কড়ি, মাখো তেল’ নীতি চলছে। যে কোনও কাজ করে দিলে টাকা দিতে হবে, শাসক দলে এটা এখন দস্তুর। আগেও এটা প্রকাশ্যে এসেছে। বিজেপিতেও একই ব্যাপার। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারকে ক’দিন আগে বিজেপিরই কর্মী-সমর্থকেরা ঘেরাও করেছিলেন একই কারণে। এই জন্যই বিজেপির নেতারা তৃণমূলে এবং তৃণমূলের নেতারা বিজেপিতে গিয়ে স্বচ্ছন্দ থাকেন।’’