উঠছে হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ

খেজুরি ও পটাশপুরে বাম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে পটাশপুর থানার সিংদা এলাকায় ব্রজলালপুর ও পাহাড়পুর গ্রামে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূল সমর্থকদের মারে দুই গ্রামের ৬ জন সিপিএম সমর্থক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০১:১৭
Share:

হলদিয়ায় তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর। নিজস্ব চিত্র।

খেজুরি ও পটাশপুরে বাম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে পটাশপুর থানার সিংদা এলাকায় ব্রজলালপুর ও পাহাড়পুর গ্রামে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূল সমর্থকদের মারে দুই গ্রামের ৬ জন সিপিএম সমর্থক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। আহতদের উদ্ধার করে এগরা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দলেরই বিরোধীগোষ্ঠীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ দিনই ওই পঞ্চায়েত এলাকার মিলননগর বাজারের ব্যবসায়ী যতীন্দ্রনাথ জানাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

তৃণমূলের মিছিল থেকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল কেশপুরের চরকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার বিকেলে শাসকদলের পক্ষ থেকে চরকায় শহিদ স্মরণ সভার আয়োজন হয়। বছর দু’য়েক আগে এখানে খুন হন ফিরোজ আলি নামে এক তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ, সিপিএমের লোকজন তাঁকে খুন করে। নিহত কর্মীর স্মরণেই সভা হয়। স্মরণ সভা শেষে এলাকায় মিছিল করেন তৃণমূল কর্মী- সমর্থকেরা। মিছিল থেকে একাধিক সিপিএম কর্মী- সমর্থকের বাড়িতে শাসকদলের লোকেরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

চরকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। ওই ক্যাম্পের সামনে এসেও তৃণমূলের লোকেরা জয়োল্লাস করে। বিরক্ত হয় পুলিশ। এই সময় পুলিশ কর্মীরা শাসকদলের কয়েকজনকে ধমক দেন। কেন অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে জানতে চান। একাধিক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের কথা মানেনি। এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতেও নারাজ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ওখানে একটা গোলমাল হয়েছিল। মিটে গিয়েছে।” তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “তেমন কিছু হয়নি। যে গোলমাল হয়েছিল মিটে গিয়েছে।”

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, শনিবার কুলটিকরি লোকাল কমিটির অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। সাঁকরাইলে জোনাল অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ডেবরার রাধামোহনপুর লোকাল কমিটির অফিসে হামলা হয়। মোহনপুরের মালপাড়াতে সুবোধ পাল নামে এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। বিলমাটিয়াতে মারধর করা হয়েছে গোপাল পাল নামে এক কর্মীকে। ডেবরার জোনাল কমিটির অফিসেও হামলা হয়। তৃণমূলের লোকেরা এসে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে তালা খোলে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সব কর্মীকেই সংযত থাকার কথা বলা হয়েছে। কেউ কারও উপরে কোনও অত্যাচার করবে না। শান্তি বজায় রাখতে হবে। তৃণমূল সব সময়ই শান্তির পক্ষে।”

রবিবার দুপুরে ডেবরার রাধামোহনপুর ও নীচপপন গ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন ডেবরার রাধামোহনপুর-২ পঞ্চায়েতের রাধামোহনপুরে সিপিএমের একটি লোকাল কমিটির কার্যালয় ও নীচপপনে সিপিএমের শাখা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ওই গ্রাম দিয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষক চকলালপুরের সিপিএম কর্মী শঙ্কর রায়কেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “গণনার আগে থানায় শান্তি বৈঠকে সকলেই ফল প্রকাশের পরে সংযত থাকবে বলে শপথ নিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের রাধামোহনপুর অঞ্চল সভাপতি অনুপম দাসের নেতৃত্বে দলের দু’টি কার্যালয় ভাঙচুর করা হল।” এ নিয়ে তৃণমূলের ডেবরা ব্লক সভাপতি রতন দে বলেন, “আমাদের নেত্রী এ ধরনের হিংসা বরদাস্ত করেন না। কোথাও এখনই বিজয় মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও উৎসাহী কর্মী মিছিল করছে। রাধামোহনপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। যাঁরা এই কাজ করেছে শুনেছি তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে শুধু তৃণমূলই নয়, সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধেও। শনিবার রাতে হলদিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। তৃণমূলের অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিপিএম। হলদিয়ার দুর্গাচক থানায় সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক তাপসী মণ্ডল-সহ একাধিক সিপিএম নেতা কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। হলদিয়ার পুরসভার ওই ওয়ার্ডেই বাড়ি তাপসীদেবীর। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক শ্যামল মাইতির কথায়, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই।’’ তাপসীদেবীও বলেন, ‘‘ঘটনার সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকেই পটাশপুর ও খেজুরি এলাকায় বামপন্থী সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল। হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ায় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement