পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারার অভিযোগ বাঁশবেড়িয়ায়। প্রতীকী ছবি।
জলের কল নিয়ে বিবাদের জেরে বিজেপির এক বুথ সভাপতির অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিজেপি নেতার বৃদ্ধ বাবার মাথাও ফাটিয়ে দেন তিনি। এই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিজেপি করার অভিযোগেই তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের ওই নেতার। অন্য দিকে, এই ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূল। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এফআইআর করা না হলেও ৪ জনকে আটক করেছে মগরা থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাঁশবেড়িয়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি বুথ সভাপতি জগন্নাথ দাসের বাড়ির সামনে একটি সরকারি কল আছে। সেই কল নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী তথা তৃণমূলকর্মী রাখাল দাসের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের বিবাদ। শনিবার বিকেলে জগন্নাথের স্ত্রীর গায়ে জল ছেটানো নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত। জগন্নাথের দাবি, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে পুরসভার একটা কল নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আমার বাড়ির সীমার মধ্যে ওই কলটা রয়েছে। আজ আমার বৌয়ের গায়ে জল ফেলেছেন রাখাল দাসের বৌ। সে কথা বলতে গেলে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন রাখাল দাস ও তাঁর স্ত্রী দুই ছেলে। বাবাকে ঠেলে ফেলে দেন। তাঁর মাথায় সেলাই পড়েছে। আমার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পেটে লাথি মেরেছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘এটা রাজনৈতিক ঘটনা। বহু দিন ধরে আমাকে টার্গেট করেছে। আমি আগে কোনও পার্টি করতাম না। ইদানীং যে হেতু আমি বিজেপি করি, সে জন্যই হয়তো আমার এ দশা।’’ জগন্নাথের মেয়েরও দাবি, ‘‘বাবা বিজেপি করে বলেই এই ঝামেলা। দাদুকে মেরেছে, আমাকেও পেটে লাথি মেরেছে।’’
এই ঘটনায় অভিযুক্ত রাখাল ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিনতি ধরের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি। মারধরের ঘটনা নিয়ে বাঁশবেড়িয়া মণ্ডল বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘কল নিয়ে দুই পরিবারের বিবাদ অনেক দিনের। আজকেও ঝামেলার সময় তৃণমূলকর্মী এসে বুথ সভাপতির উপর চড়াও হন। মারধর করেন। আসলে তৃণমূলে এই ব্যাপারটা রয়েছে। যে যত বেশি বদমায়েশি করবে, মারধর করবে, সে তত উঁচু পোস্টে যাবে। সেটা দেখাতে গিয়ে এগুলি করছে।’’
যদিও এই ঘটনাকে সমর্থন করেন না বলে দাবি তৃণমূল কাউন্সিলরের। তিনি বলেন, ‘‘কল নিয়ে বিবাদ থেকে এই ঘটনা হয়েছে। যা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এখানে রাজনৈতিক রং নেই। পাশাপাশি বাড়ির পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। যাঁরা মেরেছেন, তাঁরা খুব অন্যায় করেছেন। এখানে বিজেপি-তৃণমূল বলে কিছু নেই। পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। আমি বা আমার দল অন্যায়কে সমর্থন করে না।’’
বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগীরও দাবি, এতে রাজনীতি নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পানীয় জল নিয়ে এই ঘটনা কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজনীতি নেই। এই ঘটনার নিন্দা করছি। ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।’’
মগরা থানা সূত্রে খবর, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। হুগলি (গ্রামীণ)-র পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘জলের কল নিয়ে ঝামেলা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এক মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে কি না, তা আমার কাছে খবর নেই।’’