—প্রতীকী ছবি।
সমাজ না, সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প? জঙ্গলমহলে জাতিসত্তার আন্দোলনের মধ্যেই ভোটে শক্তি পরীক্ষায় নেমেছিলেন কুড়মিরা। কিন্তু উপুড়হস্ত ভোট পেল তৃণমূল। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কুড়মি গ্রামও ভরসা রাখল সামাজিক প্রকল্পেই। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রকাশিত ফলের নিরিখে ঝাড়গ্রাম জেলায় অন্তত ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছেন কুড়মিরা। এ ছাড়াও একাধিক আসনে কুড়মি নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন। তবে বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জেতায় জেলায় রাশ থাকছে তৃণমূলের হাতেই। পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়াতেও বেশ কিছু আসনে জিতেছেন কুড়মিরা।
এ দিন দুপুর থেকেই বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রের বাইরে সবুজ আবির খেলায় মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মীরা। উড়েছে ‘জয় গরাম’ শিবিরের হলুদ আবিরও। তবে সেয়ানে সেয়ানে টক্করের যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তা দেখা যায়নি। অনেক কুড়মি গ্রামে প্রচারও করতে পারেনি তৃণমূল। তার পরেও বিপুল জয় কোন অঙ্কে?
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মুর মতে, ‘‘জঙ্গলমহলের প্রতিটি পরিবার সরকারি সামাজিক প্রকল্পগুলির কোনও একটির সুবিধা পান। তাই সমাজের ডাক বা প্রতিরোধ থাকলেও মানুষ ফের তৃণমূলকেই ক্ষমতায় এনেছেন।’’ কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক ধর্মেন্দ্র মাহাতোও মানছেন, তৃণমূলের সামাজিক প্রকল্পের প্রচারকে ছাপিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ‘ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি’র নেতা অভিজিৎ কাটিয়ার বলেন, ‘‘আমাদের ভোট করানোর অভিজ্ঞতা নেই। তার উপর প্রশাসনিক নানা চাপ ও শাসক দলের ধমক-চমক ছিল।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়াতেও কিছু আসনে জিতেছেন কুড়মি প্রার্থীরা। গোয়ালতোড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে দু’টি আসনে জিতেছেন তাঁরা। মেদিনীপুর সদর ও খড়্গপুর-১ ব্লকে কয়েকটি আসনে কুড়মি নির্দলরা জিতেছেন। তবে গোয়ালতোড়ের কুড়মি নেতা আশিস মাহাতোর স্বীকারোক্তি, ‘‘তৃণমূলের উন্নয়নের প্রচারের পাল্টা আমাদের জাতিসত্তার আবেগের প্রচারে ঘাটতি ছিল।’’
পুরুলিয়ায় কুড়মি প্রার্থীরা আড়শা ব্লকের মানকিয়ারি এবং পুরুলিয়া-২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েত দখল করেছেন। সব মিলিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭০টি আসন তাঁরা পেয়েছেন। বাঁকুড়াতেও ৩৩ জন কুড়মি প্রার্থী জিতেছেন। পুরুলিয়ার আগয়া-নড়রা পঞ্চায়েতের যে কুস্তাউরে বারবার আন্দোলন হয়েছে, সেখানেও ১৪টি আসনের মধ্যে ৬টিতে কুড়মি, ৬টিতে তৃণমূল ও ২টিতে বিজেপি জিতেছে। পাশের বেলমা পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ কুড়মিরাই। তবে আশানুরূপ ফল না হওয়া নিয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলির মতো সংগঠন গুছিয়ে ভোটে নামিনি।’’ (সহ-প্রতিবেদন: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)