চা বাগান সমস্যা নিয়ে বৈঠকে মন্ত্রী গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে অচলাবস্থার জন্য কেন্দ্রকে দুষে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে দলের পাহাড়, সমতলের শতাধিক চা শ্রমিক নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী জেমস কুজুর –সহ অন্যরা। ঘন্টা দু’য়েকের বৈঠকের পর আগামী ২৮ নভেম্বর, সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গে আন্দোলনে নামার ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ২ ডিসেম্বর কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল, চা পষর্দের দফতর ঘেরাও করার ঘোষণা করা হয়েছে। বাগানের মজুরি নিয়ে নির্দেশিকা বাতিলের দাবিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন,‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় চা শিল্পে চরম সঙ্কট নেমে এসেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দিলেও আদতে সবই করছে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদে চা শ্রমিকদের নিয়ে আমরা রাস্তায় নামছি।’’ আজ, শনিবার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত রিপোর্টও জমা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। বৈঠকের পর আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা রাজ্যের চা ডিরেক্টরেটের সদস্য সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার নানা নীতি নিয়ে চা শিল্পকে চাঙ্গা করছে। তখন টাকা বাতিলের আইনে চা শিল্পের ক্ষেত্রে এমন সব নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তাতে তো শ্রমিকেরা না খেয়ে মারা যাবেন।’’
চা শ্রমিক নেতারা জানান, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা জারি করায় চা শ্রমিকরা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বেশিরভাগ বাগানে শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। জেলাশাসকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে তা ফের বাগান কতৃর্পক্ষের হাতে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে তা হাতে গোনা কিছু বাগানে কার্যকর করা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ বাগানে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। এখন কর্মী, শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে বলে জানিয়েছে রির্জাভ ব্যাঙ্ক। তাতে মজুরি, বেতন জমা পড়বে। তাতেও শেষ নয়, দু’সপ্তাহে ১৪০০ টাকার বেশি অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না।
মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স মিলিয়ে চা বাগিচায় ৪ লক্ষ মতো স্থায়ী শ্রমিক এবং প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার অস্থায়ী কর্মী আছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীদের সমস্যা না হলেও তা সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু অস্থায়ীদের ক্ষেত্রে নথিপত্র তৈরি করা না গেলে শ্রমিকরা মজুরিই পাবেন না। লক্ষাধিক মানুষ কাজ হারানোর মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। এটা আমরা মানব না।’’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, আপাতত, ২৭ অগস্ট প্রতিটি বাগানের সামনে বিক্ষোভ সভা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরগুলিতেও বিক্ষোভ হবে। ২ ডিসেম্বর দুপুর ১টায় ধর্মতলা থেকে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের মিছিল বার হবে। সেই মিছিল চা পর্ষদের দফতর ঘেরাও করবে। সেখানেও বিক্ষোভ অবস্থান হবে। শিলিগুড়িতে প্রদেশ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে।