Cyclone Dana in West Bengal

ঝড়ের রাজনীতি! ‘দানা’র ঝাপটার পরের অভিঘাত মোকাবিলায় সংগঠনকে মাঠে নামাচ্ছে তৃণমূল

উপকূলবর্তী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যেমন সতর্ক করার কাজ চলছে, তেমনই সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলও প্রচারের কাজে নেমেছে। দলের পতাকা বেঁধে চলছে মাইকে প্রচার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:১৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রাজনীতির ‘ঝড়’ সামলে ঝড়ের রাজনীতির প্রস্তুতি তৃণমূলে। আরজি কর-কাণ্ডকে ঘিরে গত আড়াই মাসে রাজনীতির যে ঝড়ের মোকাবিলা করতে হয়েছে তৃণমূলকে, তা আরও জোরালো করতে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’কে সামনে রাখছে রাজ্যের শাসকদল।

Advertisement

প্রশাসন তাদের কাজ করবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র ঝাপটা শেষে যে অভিঘাত তৈরি হবে, তার মোকাবিলায় সংগঠনকে প্রস্তুত রাখছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে সেই নির্দেশিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। সাংগঠনিক জেলাগুলির সভাপতিদের পাশাপাশি ব্লক সভাপতিদেরও সেই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজে সংগঠনকে নামাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।

তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের কথায়, ‘‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্ব এবং কর্মীরা প্রস্তুত। সেই মর্মে দলের তরফে নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে। তাঁরা সেই কাজ শুরু করেছেন।’’ শাসকদলের প্রথম সারির নেতৃত্বের অনেকেরই বক্তব্য, অন্যান্য বারের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং এ বারের দুর্যোগ মোকাবিলার মধ্যে একটি মৌলিক ফারাক রয়েছে। তা হল, আরজি কর আন্দোলনের পরে মানুষের পাশে থাকার ছবি তৈরি করতে চাওয়া। এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘যেখানে যেখানে দুর্যোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে, সেখানে সেখানে আরজি কর আন্দোলনের কোনও প্রভাব নেই ঠিকই। কিন্তু প্রান্তিক অংশের মানুষের পাশে থাকার জন্য গোটা দল নামলে বৃহত্তর রাজনীতিতে তার প্রভাব নিশ্চয়ই তৈরি হবে।’’ নভেম্বরের ১৩ তারিখে রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেই ভোটের আগে মানুষের পাশে থাকার ‘বৃহত্তর ছবি’ তুলে ধরতে চাইছে আরজি কর-কাণ্ডে ‘বিপন্ন’ শাসকদল।

Advertisement

উপকূলবর্তী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যেমন মানুষকে সতর্ক করার কাজ চলছে, তেমন সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলও প্রচারের কাজে নেমেছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় টোটো বা রিকশায় তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে মাইকে প্রচার চলছে। প্রশাসনিক ভাবে বেশ কিছু এলাকার উপর ‘বিশেষ’ নজর দেওয়া হচ্ছে। আমপানের সময় পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণি, জুনপুটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এ বার সেই এলাকাগুলির জন্যও ‘বিশেষ’ প্রস্তুতি রাখছে জেলা প্রশাসন। সাংগঠনিক ভাবেও ওই এলাকাগুলির জন্য তৃণমূল স্থানীয় স্তরে দলকে বার্তা দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন, ‘‘প্রশাসনের পাশাপাশি দলও ময়দানে রয়েছে। ইতিমধ্যেই রেসকিউ সেন্টারগুলিতে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতিও জানিয়েছেন, তাঁর জেলায় দাঁতন ১ এবং ২ নম্বর ব্লক, মোহনপুর, নারায়ণগড় এবং পিংলার জামনায় ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে। সেই সব এলাকাগুলিতে মানুষের প্রয়োজনে দলের নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কলকাতা শহরেও পুরসভার তরফে কাউন্সিলরদের কাছে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টনের তালিকা পৌঁছে গিয়েছে। পাশাপাশি, সাংগঠনিক ভাবেও বলা হয়েছে দলকে প্রস্তুত থাকতে। সিইএসসি-র কোন ‘গ্যাং’ কোন ওয়ার্ডে, কোন এলাকায় প্রস্তুত থাকবে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে কে থাকবেন, সেই নামের তালিকা, ফোন নম্বর-সহ কাউন্সিলরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সমান্তরাল ভাবে দলের শাখা সংগঠনগুলিকেও বলা হয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে।

এই ঝড়ের রাজনীতির ছবি দেখা গিয়েছিল লোকসভা ভোটের আগেও। কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি। সেই রাতেই সেখানে পৌঁছেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতভর রাস্তায় থেকে উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ তদারকি করেছিলেন তিনি। পরদিন সকালে পৌঁছেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে সেখানকার মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল শাসকদল তথা সরকার। ভোটের ‘আদর্শ আচরণবিধি’র জন্য সেই সময়ে নির্বাচন কমিশন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে ‘বাধা’ দিয়েছিল। পাল্টা তৃণমূল চেষ্টা করেছিল এমন একটি ভাষ্য তুলে ধরতে, যেখানে বোঝানো হয়েছিল, সরকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু কমিশন তা হতে দিচ্ছে না। যদিও তার পরেও জলপাইগুড়ি লোকসভায় জেতেনি তৃণমূল।

আরজি কর আন্দোলনের শুরু থেকে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা যে খানিকটা ‘গুটিয়ে’ ছিলেন, তা একান্ত আলোচনায় গোপন করেননি শাসকদলের প্রথম সারির নেতারা। কিন্তু পুজোর আগে থেকে সেই জড়তা যে কাটতে শুরু করেছিল, তৃণমূল নেতৃত্ব তারও আঁচ পাচ্ছিলেন। ঘটনাচক্রে, তখন থেকেই আরজি কর নিয়ে জেলার শহর, মফস্সলে নাগরিক আন্দোলনও ধীরে ধীরে স্তিমিত হচ্ছিল। তৃণমূল পরিকল্পনা করেছিল, জড়তা কাটাতে বিজয়া সম্মিলনীকে ‘হাতিয়ার’ করা হবে। জেলায় জেলায় সেই কর্মসূচিও চলছে। তাতে ভিড়ও চোখে পড়ছে। এ বার ঝড়ের মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি দলকে নামিয়ে দু’টি কাজ করতে চাইছে তৃণমূল। এক, নেতা-কর্মীরা যাতে ‘নড়েচড়ে’ কাজ করেন, তার জন্য ঝাঁকুনি দেওয়া। দুই, মানুষের সামনে ছবি তুলে ধরা।

যদিও বিরোধীরা তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী যেমন বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ত্রাণের কাজে নামবে শুনলে লোকে ভয়ই পাবে। কারণ আবার ত্রিপল, চাল ইত্যাদি চুরি হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement