Teesta water sharing agreement

বাংলাকে এড়িয়ে গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছে কেন্দ্র! বিধানসভায় আলোচনা চায় তৃণমূল

জলচুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গকে ‘এড়িয়ে’ গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই এই চুক্তি কার্যকর করতে উদ্যত হয়েছে কেন্দ্র, এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের। তাই সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব এনে তার উপর আলোচনা করতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দল। তবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের রণনীতি এখনই খোলসা করতে নারাজ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। শাসকদলের পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, চলতি বিধানসভা অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি আনা হবে। আগামী বুধবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে আবারও বসবে বিধানসভার কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক। ২ এবং ৫ অগস্টের সেই বৈঠকে বিধানসভায় কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা স্থির হবে। মনে করা হচ্ছে, ওই দিনই গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি-সহ বাংলার নদী সংস্কার, জল বিভাজন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ এনে প্রস্তাব আনা হবে। জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বরাবর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সেই মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করেই এগোতে চাইছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাই বিধানসভায় প্রস্তাব এনে মোদী সরকারকে ‘বার্তা’ পাঠাতে চাইছে মমতার দল। এমনটাই মনে করছেন জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।

Advertisement

নবান্ন সূত্রে খবর, জলচুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলেই আলোচনার জন্য তাদের পাঠানো হবে। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আলোচনা করেনি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। এ ভাবে রাজ্যের স্বার্থকে ‘উপেক্ষা’ করে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা নীতি মেনে নিতে নারাজ রাজ্য। তাই বিধানসভায় প্রস্তাব এনে কেন্দ্রকে ‘বার্তা’ দিতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দল। তবে এই বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল পরিষদীয় দলের কোনও সদস্য। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শাসকদলের কার্যবিবরণী কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বিধানসভার অধিবেশনে কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা কমিটির বৈঠকের আগে কোনও ভাবেই বলা সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তাব দেব, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন স্পিকার। তিনি যদি মনে করেন বিষয়টি বিধানসভায় আলোচনার জন্য সঠিক, তবেই সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দিনক্ষণ ধার্য হবে। তাই কোন বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনা হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”

এখন বিধানসভায় ‘ইন্দো-ভুটান জয়েন্ট রিভার কমিশন অফ মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং ফ্লাড সিচুয়েশন’ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় গত শুক্রবার অর্থনীতিবিদ তথা বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী নিজের বক্তৃতা বলেছেন, “এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন বিষয়। যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আলোচনার কোনও এক্তিয়ার নেই রাজ্যের।” তাই বিজেপি পরিষদীয় দল মনে করছে, কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থেই এমন প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আনতে পারে শাসকদল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রেও তাদের যুক্তি, দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এমন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যথেষ্ট সংবেদনশীল বিষয়। এ ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যের সরকারের এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অধিকার নেই। তবে এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে আবারও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলেই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement