সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরে এত দিন পার হয়ে গেলেও মামলার নিরসন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধন-কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে। — ফাইল ছবি।
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হবে উপনির্বাচন। বাংলাতেও আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি আসনে। গণনা ২ মার্চ। এই আসনের বিধায়ক ছিলেন প্রয়াত সুব্রত সাহা। তিনি রাজ্যের রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। বিধায়কের মৃত্যুর কারণে খালি থাকা উত্তর কলকাতার মানিকতলা আসনেও উপনির্বাচন দরকার। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে খালি হওয়া মানিকতলায় উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। এর জন্য বিজেপিকেই দায়ী করছে তৃণমল।
সাধন পাণ্ডের মৃত্যু হয় গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি। তার অনেক পরে, সাগরদিঘির বিধায়ক মারা যান গত ২৯ ডিসেম্বর। তবু মানিকতলায় ভোট নয় কেন? নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে কিছু জানায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে মানিকতলা আসনে গণনায় কারচুপির অভিযোগে আদালতে মামলা চলাতেই উপনির্বাচন হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়। মানিকতলায় বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে হারান ২০ হাজার ২৩৮ ভোটে। তার দু’মাস পরে ৪ জুলাই ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগের সঙ্গে পুর্নগণনার দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন কল্যাণ। তিনি দাবি করেন, ২ মে ফল ঘোষণার পরে পরেই নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফে। এখনও সেই মামলা বিচারাধীন।
সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরে এত দিন পার হয়ে গেলেও ওই মামলার নিরসন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধন-কন্যা তথা মানিতলা আসন এলাকার তৃণমূলের আহ্বায়ক শ্রেয়া পাণ্ডে বলেন, ‘‘বাবা মারা গিয়েছেন এত দিন হয়ে গেল। এখনও মামলা চলছে। উপনির্বাচন না হওয়ায় এখানকার মানুষ বিধায়কের থেকে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কবে ভোট হবে সেটা তো নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে তবে আমি আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই সেটা সম্ভব হবে।’’ শ্রেয়া আরও বলেন, ‘‘মামলা যখন হয়, তখন বাবা অসুস্থ। চিঠিটা আমরা যখন পাই, তখন বাবা অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে। বাবার মৃত্যু হয়েছে। সেই মামলা এখন আমি লড়ছি। দলও লড়ছে। তবে আমি এই মামলার মধ্যে কোনও যুক্তি দেখতে পাচ্ছি না।’’
বিজেপি অবশ্য সেই দাবি মানতে নারাজ। দলের উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, ‘‘গণনায় কারচুপির জন্য মামলা হয়েছিল। এখন মামলার কী পরিস্থিতি আমি জানি না। প্রথমত বিষয়টি বিচারাধীন আর উপনির্বাচন কবে হবে তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। আমাদের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই।’’
তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন উপনির্বাচন হলে মানিকতলায় দল শ্রেয়াকেই প্রার্থী করবে। সেই কারণেই তাঁকে ওই আসন এলাকায় আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে শ্রেয়ার বক্তব্য, ‘‘দল যাঁকে প্রার্থী করবে, আমি তাঁর হয়েই কাজ করব। আমাকেই প্রার্থী করা হবে কি না সেটা আমি বলতে পারব না। তবে বাবার মৃত্যুর পরে দলের পাওয়া দায়িত্বে আমি সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার কাজটা করে যাচ্ছি।’’
এই আসন থেকে পর পর তিন বার বিধায়ক হয়েছিলেন সাধন। তবে প্রতি বারই তাঁর ব্যবধান কমে। ২০১১ ও ২০১৬ সালে সিপিএম দ্বিতীয় জায়গায় থাকলেও ২০২১-এর নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায় বিজেপি। তৃণমূলের জয়ের ব্যবধানও কমে যায়। যদিও শ্রেয়ার দাবি, যে দিনই উপনির্বাচন হোক মানিকতলায় তৃণমূল রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে জিতবে।