জিএসটি বিলে সমর্থন দিয়ে বার্তা তৃণমূলের

রাজনীতি ভুলে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কারের পাশে দাঁড়াল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদের চলতি অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত সংশোধনী বিলটি নিয়ে এগোতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন তাঁকে জানিয়ে দিলেন, এই বিষয়ে তৃণমূল কেন্দ্রকে সমর্থন দেবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৩৩
Share:

রাজনীতি ভুলে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কারের পাশে দাঁড়াল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদের চলতি অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত সংশোধনী বিলটি নিয়ে এগোতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন তাঁকে জানিয়ে দিলেন, এই বিষয়ে তৃণমূল কেন্দ্রকে সমর্থন দেবে।

Advertisement

জিএসটি নিয়ে আজ এমপাওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন জেটলি। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা ভাবে দশ মিনিট কথা বলেন অমিত মিত্র। তাঁর এই বৈঠক এবং সেখানে জিএসটি নিয়ে কেন্দ্রকে সমর্থন জানানোর প্রসঙ্গটি নিয়ে দিল্লির রাজনীতিকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম থেকেই মোদী প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতার বার্তা দিয়ে এসেছে। বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি তোলা, সংসদে বিরোধীদের একজোট করে বিল পাশের পথ আটকানোর চেষ্টা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বৈঠকে যোগ না দেওয়া— সব কিছুই রয়েছে সেই তালিকায়। মোদী সরকারের ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও যোগ দেননি। অনেক ক্ষেত্রে অমিত মিত্র, এমনকী রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিকেই পাঠাননি। জমি বা পেনশন বিল নিয়ে প্রতিবাদ তো বটেই, কালো টাকা নিয়ে কখনও একক ভাবে, কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিনের পর দিন প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা।

রাজনীতিকদের একাংশ বলছেন, এ বার তো সেই কংগ্রেসেরই দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কী ভাবে? তাঁদের বক্তব্য, সীতারাম ইয়েচুরি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে তাদের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ভাল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। বাম দলের যে অংশটি মনে করে, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সখ্য আরও বাড়ানো উচিত, সীতা তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আপত্তিতে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেন প্রকাশ কারাট। তার পরেও কিন্তু সীতারাম একাধিক বার কংগ্রেস আর সিপিএমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলেছেন। এমনকী, কারাট বারবার যতই কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাদ দিয়ে তৃতীয় বিকল্পের কথা বলুন না কেন, সীতা তাঁর কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠতার তত্ত্ব থেকে সরেননি। কারাট কখনও সংসদীয় রাজনীতিতে পা রাখেননি। কিন্তু সাংসদ হিসেবে সীতা দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন।

Advertisement

সিপিএম এবং কংগ্রেস যদি এখন কাছাকাছি আসে তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের পক্ষে সেই জোটে ঢোকার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় তৃণমূল জিএসি সংশোধনী বিলটিকে সমর্থনের কথা বলে বিজেপিকে বার্তা দিয়ে রাখল বলেও এক পক্ষের বক্তব্য।

জিএসটি সংশোধনী বিলটিকে সমর্থন করা নিয়ে অবশ্য অমিতবাবুর যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জিএসটি-র পক্ষে। সে কথা দলের ইস্তাহারেই বলা হয়েছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মোদী সরকারের কোনও পদক্ষেপ যদি আমজনতা এবং রাজ্যের স্বার্থে হয়, তা হলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে তার বিরোধিতা করবে না তৃণমূল। সম্প্রতি রাজ্যসভায় কয়লা বিলে কংগ্রেস-সিপিএম একজোট হয়ে বিরোধিতা করলেও তৃণমূল তাকে সমর্থন করেছিল। জিএসটির বেলাতেও পণ্য-পরিষেবার উপরে নির্ভরশীল পশ্চিমবঙ্গ আপত্তি করেনি। বরং তুলনায় যে সব রাজ্যে উৎপাদন বেশি হয়, সেই মহারাষ্ট্র বা গুজরাতের মতো রাজ্যগুলি নিজেদের ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যে মূলত পণ্য বেশি কেনা হয়, জিএসটি চালুর ফলে রাজস্ব আয়ের দিক থেকে তারা বেশি লাভবান হবে। অমিতবাবুর অবশ্য দাবি, এর ফলে প্রথম বছরে প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে রাজ্যের। কেন্দ্রকে এই ক্ষতিও মিটিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন অমিতবাবু। কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোদী সরকার ৫৪০ কোটি টাকা মিটিয়েছে। অমিতবাবুদের দাবি, এখনও কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা।

তৃণমূলের সমর্থনের আশ্বাস পাওয়ার পরে এই সংশোধনী বিলটি নিয়ে আশাবাদী জেটলি। তিনি মনে করছেন, ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছর ১ এপ্রিল থেকেই জিএসটি চালু করা যাবে। গত ডিসেম্বরে সংসদে এই বিলটি পেশ করেছিল মোদী সরকার। এ বার জিএসটি নিয়ে রাজ্যগুলির যে সব সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।

জিএসটি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বা সিএসটি-র হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয়েছিল। তার জন্য রাজ্যের যে রাজস্ব ক্ষতি হয়, সেটাই মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে মমতার সরকার। লোকসভায় বিল পেশের সময়ই জেটলি জানিয়েছিলেন, ধাপে ধাপে ওই ক্ষতি মিটিয়ে দেওয়া হবে। তার সঙ্গে জিএসটি চালু হওয়ার পরেও রাজস্ব ক্ষতি হলে তা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রের বক্তব্য, প্রথম তিন বছর রাজ্যের ১০০ শতাংশ ক্ষতি কেন্দ্র মিটিয়ে দেবে। চতুর্থ বছরে ৭৫ ভাগ এবং পঞ্চম বছরে ৫০ ভাগ ক্ষতি মিটিয়ে দেওয়া হবে। এরপরে আর কোনও রাজ্যেরই অনুযোগ থাকার কথা নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement