মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।
দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত বৈঠক, বিরোধী দলগুলির থেকে দলের ‘দূরত্ব’ তৈরি নিয়ে চর্চা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে তৃণমূলকে নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক’ প্রতিবাদের কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিষয়টিতে অন্য মাত্রা যোগ করল তৃণমূল।
আজ, শুক্রবার থেকে দু’দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠন। দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে ‘নিরপেক্ষ’ হতে হবে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, দু’দিনের এই কর্মসূচির পরে ১৪ অগস্ট প্রাক্-স্বাধীনতা দিবসের একটি সভা থেকে দলের ভবিষ্যৎ ভূমিকা ও পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালার ম্যান্টনে বরাবর ওই কর্মসূচিতে থাকেন তৃণমূলনেত্রী। এবং প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে থেকেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ বার পার্থ নেই। কিন্তু তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মমতা যথারীতি সেখানে যাবেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দলকে ‘দিক-নির্দেশ’ দেবেন।
বৃহস্পতিবার বীরভূমের দলীয় সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে বিকেলে দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী। সেখানেই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ আনেন তাঁরা। চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘বিজেপি-বিরোধী
দলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে উঠেপড়ে লাগছে। কিন্তু শাসকদলের (বিজেপি) বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত এগোচ্ছে না।’’ সেই সঙ্গেই কেন্দ্রীয় সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিরপেক্ষ চেহারা দুর্বল হচ্ছে। রাজনৈতিক চেহারা বেরিয়ে পড়ছে। বিচারব্যবস্থা নিশ্চয় বিষয়গুলি দেখবে।’’
কেন অনুব্রতকে গ্রেফতার করা হল, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল অবশ্য সে প্রশ্ন তোলেনি। দলের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বা বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন্দ্রীয় সংস্থা। দলের অন্যতম মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে নারদ মামলার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মন্ত্রী ও নেতাদের রাতের বেলায় বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হল। আর একই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শুভেন্দু অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডাকা হল না?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সারদাকর্তা লিখিত ভাবে শুভেন্দুর নাম করেছেন। কাঁথি পুরসভার নথি হারিয়েছে। শুভেন্দুর ভাই সেখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সবও এজেন্সি দেখছে না।’’
এই অভিযোগে বিজেপিকে বিঁধেছে অসম তৃণমূলও। পশ্চিমবঙ্গে ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেফতার ও তাঁদের কাছ থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের কথা টেনে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও তাঁর ছেলের ব্যবসার অংশীদারকে ধরতে এলে তাঁর বাড়ির বাইরে পুলিশি প্রহরা বসানো হয়। বার বার তলব করলেও তিনি হাজির হওয়ার পরোয়া করেন না। এই বিভাজন কেন হবে?’’ মহারাষ্ট্রে সরকার বদলে টাকার লেনদেন ও ঝাড়খণ্ডের বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘নিস্পৃহতা’র অভিযোগ করেছে তৃণমূল।