(বাঁ দিক থেকে) বিচারপতি অমৃতা সিংহ, কুণাল ঘোষ এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিচারপতি সৌমেন সেন সম্পর্কে ভরা এজলাসে বসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল তৃণমূল। শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এখন আর বিচারপতি নন। তিনি আর এক বিচারপতি অমৃতা সিংহের উকিল হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তা চক্ষুলজ্জাহীন রাজনীতির নামান্তর।’’
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে অনেকেই বিচারপতি বনাম বিচারপতির ‘সংঘাত’ হিসেবে দেখছেন। ওই ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত বলেন, ‘‘অনেক সময়ে মতের অমিল হয় বিচারপতিদের। তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই ধরনের সংঘাতের পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।’’
ঘটনার সূত্রপাত রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা নিয়ে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বুধবার। তা নিয়েই বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে। বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা নির্দেশ দেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, বিচারপতি সেন ‘রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা’ ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। যা করছেন, তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে করছেন। ভরা এজলাসেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে যা জানান, তার মর্মার্থ: বিচারপতি সেন বিচারপতি অমৃতা সিংহকে ডেকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে তোলপাড় পড়েছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণালের বক্তব্য, ‘‘বিচারপতি সিংহকে বিচারপতি সেন কী বলেছেন, তা তো বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জানার কথা নয়! এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দুই বিচারপতি মিলে হাইকোর্টে দলবাজি করছেন! আসলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই রাজনীতি করছেন। এত দিন ধরে এই কথাটাই আমি এবং আমরা বলে আসছি।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট— দেশের সব বিচারক, বিচারপতিই তো ন্যায়বিচারের কাজ করছেন। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দেখাতে চাইছেন উনি একাই কাজ করছেন। একাই সৎ। তা তো নয়। বাকিরা কি তা হলে আঙুল চুষছেন?’’
কুণালের মতোই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আজ যা হল, তা কলকাতা হাই কোর্টের ইতিহাসে কলঙ্কজনক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মান এত নীচে নেমে গিয়েছে আর কী বলব! তাঁর কোনও মামলায় স্থগিতাদেশ হলেই তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ব্যক্তিগত আক্রমণে চলে যাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’