ভোটের সময়ে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, টাকা ছড়িয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করতে চাইছে বিজেপি। ফাইল চিত্র।
প্রচারে লড়াই ছিল তুল্যমূল্য। তার পরে বিজেপিকে শেষ পর্যন্ত টেক্কা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু ভোটের ফলেই নয়, নির্বাচনী প্রচারের খরচেও!
নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া হিসেব অনুযায়ী, বাংলার বিধানসভা ভোটে বিজেপি এ বার খরচ করেছে ১৫১ কোটি ১৮ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫২১ টাকা। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের খরচ পরিমাণ এর চেয়েও কিছু বেশি। তারা ব্যয় করেছে ১৫৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯১৪ টাকা। খরচের এই অঙ্ক নিয়েও অবশ্য তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির। দু’পক্ষেরই দাবি, অন্য পক্ষ যা হিসেব দাখিল করেছে কমিশনের কাছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করেছে ভোটের প্রচার-পর্বে!
বাংলা, কেরল, অসম, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে ৬ মাস আগে হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে কোন দল কত টাকা খরচ করেছে, তার হিসেব জমা পড়েছে কমিশনে। সেই হিসেবের নিরিখেই দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি পাঁচ রাজ্যে ভোটের প্রচারে বিপুল খরচ করেছে। অঙ্কের হিসেবে যার পরিমাণ ২৫২ কোটি ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৫৩ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৬০% অর্থাৎ ১৫১ কোটি টাকাই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের দল খরচ করেছে বাংলা দখলের লক্ষ্যে! অসমে তাদের খরচ প্রায় ৪৩ কোটি, কেরলে প্রায় ২৯ কোটি। বাংলায় তৃণমূল অবশ্য বিজেপির চেয়ে ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বেশি খরচ করেছে প্রচারে। আর এই রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস বিজেপি-তৃণমূলের চেয়ে বহু পিছিয়ে। পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে কংগ্রেসের খরচের অঙ্ক ৮৪ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯৮৬ টাকা। সিপিএমের খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ১১২ টাকা। তার মধ্যে আছে কেরলও, যেখানে এ বার নজির গড়ে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে বামেরা।
ভোটের সময়ে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, টাকা ছড়িয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করতে চাইছে বিজেপি। কমিশনের হিসেব সামনে আসার পরে তৃণমূলকে কটাক্ষ করছেন বিজেপি নেতারা। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলতেন, বিজেপি টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনে নিতে চাইছে। আর ওঁদের গরিব দল, শুধু ভালবাসা নিয়ে লড়ছেন। এখন কমিশনের তথ্য উল্টো কথা বলছে!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘তৃণমূলের খরচ ১৫৪ কোটি হতেই পারে না। শুধু কলকাতায় দেওয়া ফ্লেক্স গুনলেই বোঝা যাবে আসলে খরচের বহর কত!’’ তাঁর ওই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের সাংসদ ও মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিজেপির কয়েকশো নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ বিমান, কপ্টার, গাড়ি আর হোটেলেই পাহাড় প্রমাণ খরচ করেছেন! প্রচার আর অন্য সব কিছু নিয়েও বিজেপি যে হিসেব দিয়েছে, তা মোট খরচের ভগ্নাংশও নয়। আমরা যা খরচ করেছি, তা-ই হিসেব দিয়েছি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সফরের খরচ নিশ্চয়ই এর মধ্যে নেই। তাঁরা তো তখন ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতেন! সে সব ধরলে অঙ্কটা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হবে!’’