হিরণের এই ছবিতেই প্রযুক্তির কারিকুরি করে তা তৃণমূলের কার্যালয়ে তোলা বলে চালানো হচ্ছে, দাবি বিজেপির।
বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। এই আবহেই রবিবার মেদিনীপুরে এসে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘নিয়েই নিক না (তৃণমূল)! ঝামেলা চুকে যাবে!’’
অভিনেতা-বিধায়ক হিরণের সঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর তথা বিধায়ক অজিত মাইতির একটি ছবি প্রকাশ্যে আসার পরে দলবদলের জল্পনার মাত্রা বেড়েছে। ছবিটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে তোলা বলে তৃণমূল শিবিরের একাংশের দাবি। বিজেপি শিবিরের একাংশ আবার ওই ছবিটি বিকৃত (সুপার ইম্পোজ়) করা হয়েছে বলে পাল্টা দাবি তুলেছে। তারই মধ্যে দিলীপের এ দিনের মন্তব্য নতুন করে শোরগোল ফেলেছে।
দিলীপ এখন মেদিনীপুরের সাংসদ। তবে আগে খড়্গপুরের (সদর) বিধায়ক ছিলেন। এখন ওই কেন্দ্রেরই বিধায়ক হিরণ। বিজেপির অন্দরে দিলীপ-হিরণ সম্পর্ক বিশেষ স্বস্তির নয়। খড়্গপুরে রাস্তায় সংঘর্ষে পর্যন্ত জড়িয়েছে সাংসদ ও বিধায়কের অনুগামীরা। পক্ষান্তরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে হিরণের। বিভিন্ন সভায় শুভেন্দুর পাশেই দেখা যায় তাঁকে। ফলে, দিলীপের কটাক্ষে পুরনো বিরোধেরই আঁচ পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ দিন মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন সাংসদ দিলীপ। সেখানেই তৃণমূল কার্যালয়ে হিরণের ছবি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এতে আমি আর কী বলব? অজিত মাইতি বলবে, আর হিরণ বলবে। এর মধ্যে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ এতে বিজেপির অস্বস্তি হচ্ছে না? পদ্মের সাংসদের দাবি, ‘‘বিজেপির কোনও অস্বস্তি নেই। বিজেপি বহু লোককে জায়গা দিয়েছিল। রাজনীতিতে কে কোথায় থাকবে, এটা তাঁকেই ঠিক করতে হবে।’’ দলের অস্বস্তির প্রশ্ন উড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও দাবি, ‘‘আমাদের তো অন্য দলের বিধায়কের প্রয়োজন পড়ে না! ওদের বিধায়ক কম পড়েছে মনে হয়! তাই আমাদের বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা এই নিয়ে চিন্তিত নই।’’
হিরণ এ দিনও ফোন ধরেননি। তবে বিজেপি শিবিরের একাংশের দাবি, হিরণ ও অজিতের এক ফ্রেমের ছবিটি বানানো। হিরণ ফ্যান ক্লাবের তরফে সমাজমাধ্যমে পাল্টা একটি ছবিও (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি মাল্টিপ্লেক্সের সোফায় একা বসে আছেন হিরণ। পিছনে সেই মাল্টিপ্লেক্সের নাম। হিরণ অনুগামীদের দাবি, আসল এই ছবিটিতেই কারসাজি করে তৃণমূলের প্রতীক দিয়ে দলীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে। অজিত মাইতির ছবিও জোড়া হয়েছে সেখানে। মেদিনীপুর জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইতের দাবি, ‘‘তৃণমূল ওই নকল ছবি ছড়িয়েছে।’’
তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন, ‘‘হিরণ আর আমার যে ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটাই সত্যি। হিরণ গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে। আমিও ছিলাম। আমার গাড়িতেই হিরণ কলকাতা গিয়েছিলেন।’’ গত চার মাস ধরে হিরণ তৃণমূলে আসতে চাইছেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেবেন, আবারও এ কথা জানিয়ে অজিতের কটাক্ষ, ‘‘হিরণের কোনও টেবিল ফ্যান বা সিলিং ফ্যান আসল ছবিটি বিকৃত করেছে! তবে সে খুবই দুর্বল ফ্যান। আমাকে ছবি থেকে ‘ভ্যানিশ’ করার জালিয়াতিও সঠিক ভাবে করতে পারেনি!’’