বিরোধী পুরসভা দখলের খেলায় এগোচ্ছে তৃণমূল

একটি ওয়ার্ডেও না জিতে রাতারাতি দু’টি পুরসভার দখল নিয়ে ফেলল তৃণমূল! একটি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ। অন্যটি পুরুলিয়ার ঝালদা। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ নিয়ে কার্যত প্রকাশ্যে গা ঘামানো চলছিলই। সোমবার ওই পুরসভার ১১ জন বাম কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিলেন শাসক দলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৭
Share:

তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলরদের নাম পড়ে শোনাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূল ভবনে। নিজস্ব চিত্র

একটি ওয়ার্ডেও না জিতে রাতারাতি দু’টি পুরসভার দখল নিয়ে ফেলল তৃণমূল! একটি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ। অন্যটি পুরুলিয়ার ঝালদা।

Advertisement

জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ নিয়ে কার্যত প্রকাশ্যে গা ঘামানো চলছিলই। সোমবার ওই পুরসভার ১১ জন বাম কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিলেন শাসক দলে। তুলনায় কিছুটা গোপনীয়তা ছিল ঝালদা নিয়ে। বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে এ দিন ঝালদারও ৭ জন কাউন্সিলর নাম লেখালেন তৃণমূলে। তার ফলে দু’টি পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলল তৃণমূল।

তবে এই রাজনৈতিক পরিবর্তনও নেহাতই খণ্ডচিত্র মাত্র। বৃহৎ ছবিটা হল, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরকে আগামী দিনে এ ভাবেই বিরোধী-শূন্য করে দিতে চাইছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে যেখানে তৃণমূল জিতেছে, সেখানে বিরোধী শিবিরের এমনিতেই মাজা ভাঙা অবস্থা। কিন্তু ‘একা ২১১-র’ পরিবেশেও যেখানে সাংগঠনিক ভাবে বা নির্বাচনে সাফল্য পাওয়া যায়নি, সেখানে ভাঙিয়ে আনার খেলা আপাতত চলবে। তা সে মুর্শিদাবাদ হোক বা পুরুলিয়া, কিংবা মালদহ বা উত্তর দিনাজপুর। ঠিক যেমনটা হয়েছে জিয়াগঞ্জ বা ঝালদায়। রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দাপট সত্ত্বেও সেখানে তাদের নির্বাচনী সাফল্য ছিল অধরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার দুই বিধানসভা কেন্দ্র পরের কথা, পুরসভা ভোটেও সেখানে ন্যূনতম সাফল্য পায়নি তৃণমূল। একই ভাবে কয়েক দিন আগে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ পুরসভারও দখল নিয়েছিল তৃণমূল।

Advertisement

তৃণমূলকে আগামী দিনে এ ভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলার ইঙ্গিতটাও এ দিন দিয়েছেন শাসক দলের দুই তরুণ তুর্কী— যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের তৃণমূলে সামিল করার জন্য এ দিন তৃণমূল ভবনে বৈঠক ডেকেছিলেন শাসক দলের এই দুই নেতা। সেখানেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের পর মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস বলে কিছু থাকবে না।’’ সূত্রের মতে, জঙ্গিপুর ও জিয়াগঞ্জের পর এ বার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা পুরসভাকে ‘টার্গেট’ করেছেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে ভাঙানোর চেষ্টা চলছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দুর্গ বহরমপুর পুরসভাতেও। তবে বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের ‘ভাঙিয়ে আনার’ কথা মানছেন না অভিষেক-শুভেন্দু। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বাম-কংগ্রেসের অশুভ আঁতাঁত নিয়ে এঁদের আপত্তি। ওঁরা স্বেচ্ছায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হতে চেয়েছেন।’’

স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে কিছুটা অসহায় বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, ‘‘গণতন্ত্রকে হত্যা করার প্রক্রিয়া চলছে রাজ্য জুড়ে। বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের কোথাও পুলিশকে দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে, কোথাও প্রলোভন দিয়ে তৃণমূলে সামিল করানো হচ্ছে।’’একই ভাবে শাসক দলের সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে রাজ্য রাজনীতিকে বিরোধী-শূন্য করে দেওয়ার পরিকল্পনা স্বৈরাচারী শাসনের লক্ষণ। এ ভাবেই যদি পুরসভা, বিধানসভার দখল নিতে হয়, তা হলে নির্বাচন করিয়ে লাভ কী!’’ তৃণমূলের ‘অনৈতিক’ রাজনীতি নিয়েও সমালোচনা করেন অধীরবাবু। বলেন, ‘‘আসলে এ ধরনের অনৈতিক রাজনীতিতেই পটু তৃণমূল। শাসক দলে এমনও নেতা রয়েছেন, যিনি গত লোকসভা ভোটের আগে কখনও কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, আবার লোকসভা ভোটের পর সিবিআইয়ের ভয়ে বিজেপি-র সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। এখন হাওয়া বুঝে দিদিমণির প্রতি আনুগত্য দেখাতে অতিশয় বিপ্লবী হয়ে ভাঙাভাঙির খেলায় নেমে পড়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement