তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সুখেন্দুশেখর রায়। আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে তৃণমূল সাংসদের একাধিক কার্যকলাপ বেশ ‘অস্বস্তি’তে ফেলেছিল শাসকদলকে। সমাজমাধ্যমে একের পর এক পোস্ট বিতর্ক বাড়িয়েছিল। এই আবহেই এ বার তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়লেন সুখেন্দু। মঙ্গলবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাংসদ নিজেই। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যাতেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। যদিও সোমবার সকালে প্রকাশিত দলীয় মুখপত্রে সম্পাদক হিসাবে নাম ছিল তাঁরই। ফলে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
সোমবার রাতেই সমাজমাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন সুখেন্দুশেখর। অশোকস্তম্ভের ছবি-সহ ওই পোস্টে লেখা ছিল ‘সত্যমেব জয়তে’। সেই পোস্টের এক ঘণ্টা আগে আরজি কর প্রসঙ্গে একটি পোস্ট করেছিলেন সাংসদ। আরজি করের (তৎকালীন) প্রধান এবং কলকাতা পুলিশের প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবির কথাও সেই পোস্টে তুলে ধরেছিলেন সুখেন্দুশেখর।
দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে সুখেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি মুখপত্রের সম্পাদক পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সোমবার সন্ধ্যায় দলের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।” যদিও এই নিয়ে এখনই আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল সাংসদ।
বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাইছেন না তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতারাও। সুখেন্দুর এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে শাসকদলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না।”
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক পদের দায়িত্বে ছিলেন দলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ইডি গ্রেফতার করলে পার্থর জায়গায় সুখেন্দুকে দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক পদ থেকে সুখেন্দুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক বার সুখেন্দু সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছেন। কখনও ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন। কখনও আবার ইঙ্গিতবাহী কার্টুন পোস্ট করেছেন।
এমনকি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তিনি। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। আরজি কর-কাণ্ড এবং তার তদন্ত সংক্রান্ত ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে সুখেন্দুকে দু’বার তলবও করেছিল লালবাজার। কিন্তু জোড়া তলবের পরেও সাংসদ লালবাজারে যাননি। গ্রেফতারির আশঙ্কায় হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। পরে নিজেই সেই পোস্ট মুছে দিয়েছিলেন এবং স্বীকার করেছিলেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা পোস্টে ‘ভুল তথ্য’ ছিল।