সুখেন্দুশেখর রায়। —ফাইল ছবি।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। বার বার বোঝাতে চেয়েছেন দলের লাইন না মেনে তিনি বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে চান। মেয়েদের রাত দখলকে আগেই সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ বার রাত দখলের পাশাপাশি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার দখলের কথাও বললেন তিনি। বুধবার রাতে ঘরের আলো নিভিয়ে দীপ জ্বালানোর ডাক দিয়েছে আন্দোলনরত জুনিয়ার চিকিৎসকদের সংগঠন। সেই কর্মসূচির পাশাপাশি অনেকে বুধবার রাতেও পথের দখল নিতে চান। আর সেই দুপুরেই নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে সুখেন্দুশেখর লিখেছেন, ‘‘রাতের দখল নেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ থাকা নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারও চাই।’’
বৃহস্পতিবার আরজি কর-কাণ্ড সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তার আগে বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আবার যখন পথে রাত জাগার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন সুখেন্দুশেখরের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে শাসকদল তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এটা অবশ্য প্রথম নয়। ১৪ অগস্ট ছিল প্রথম রাত দখল কর্মসূচি। তাতে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। তাই তিনি মনে করেন, এই সময়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়াটা জরুরি। ১৪ তারিখ দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধর্নাতেও বসেছিলেন সুখেন্দু। এর পরে নিজের দলের ‘অস্বস্তি’ বৃদ্ধি করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার দাবি জানিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কাছে। ওই পোস্টেই কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আরজি করের ঘটনার তিন দিন পর ডগ স্কোয়াড গিয়েছিল হাসপাতালে। কেন এই বিলম্ব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুখেন্দু।
এর পরেই ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কলকাতা পুলিশ সুখেন্দুকে লালবাজারে ডেকে পাঠায়। যদিও তিনি হাজির হননি। পরে কলকাতা হাই কোর্টে সুখেন্দু স্বীকার করে নেন, আরজি কর-কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে ভুল তথ্য ছিল। উচ্চ আদালতে নিজের ভুল স্বীকার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট মুছে দেওয়ার কথা জানান সুখেন্দু। হাই কোর্টে তিনি জানান, তথ্যগত কিছু বিভ্রান্তির কারণে ওই পোস্ট করা হয়েছিল। সেটি মুছে ফেলা হবে। এর পরে সমাজমাধ্যমে আবার একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ পোস্ট করেছিলেন সুখেন্দু। ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত একটি কার্টুন শেয়ার করেন তিনি। কার্টুনটি ১৯৬২ সালের ২৬ ডিসেম্বরের। কার্টুনিস্ট আরকে লক্ষ্মণের আঁকা ছবিতে দেখা যায়, পুলিশ এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তলায় লেখা, ‘‘এটা ঠিক যে, আপনি গুজব ছড়াচ্ছিলেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি সঠিক তথ্য ছড়াচ্ছিলেন।’’ পুরনো সেই কার্টুনটি নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেন সুখেন্দুশেখর। সঙ্গে একটি অট্টহাসির ইমোজি।
এর পর গত রবিবার তিনি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে মনে করান বাস্তিল দুর্গের পতনের কথা। সুখেন্দু লেখেন, ‘‘১৭৮৯ সালের জুলাই...। বিক্ষোভকারীরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গ। জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের।’’ প্রসঙ্গত, ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই উন্মত্ত ফরাসি জনতা ভেঙে দেয় প্যারিসের বাস্তিল দুর্গ। তার পরেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। এই বাস্তিল দুর্গ ছিল রাজতন্ত্র, ইউরোপে মধ্যযুগীয় শোষণের প্রতীক। প্রশ্ন ওঠে, ইউরোপের সেই শোষণের যুগের সঙ্গে কি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানতে চাইছেন সুখেন্দুশেখর? এ বার সংবিধান মনে করিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিলেন। তৃণমূল শাসিত বাংলায় কি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে করেন সুখেন্দুশেখর?