অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য সফরের আগে এনআইএ নিয়ে তরজায় নতুন মাত্রা যোগ করল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ অগ্রণী এই তদন্ত সংস্থার অভ্যন্তরীণ ‘রদবদল’ সামনে আনল তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফে তৃণমূলের দাবি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ ভূপতিনগরের বিস্ফোরণে বিজেপির কথামতো দলের নেতাকর্মীদের হেনস্থা করছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। এই নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যে এনআইএ-এর এসপি ধনরাম সিংহের সঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির ‘গোপন বৈঠক’ নিয়েও চাপ বাড়িয়েছিল তারা। তার পরেই মঙ্গলবার সকালে নিজেদের অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণ করতে তৃণমূল দাবি করেছে, এনআইএ ওই এসপি-কে রাজ্য থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বলেছেন, ‘‘আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার পরে এসপি এক বিজেপি নেতার সঙ্গে বাড়িতে বৈঠক করতে পারেন না। তাই শুধু এসপি-কে ডেকে পাঠালে হবে না। এখানে এনআইএ-এর অধিকর্তা কেন বদল হবে না?’’ সিঙ্গুরে এ দিন দলীয় বৈঠক করতে গিয়ে অভিষেকের আরও বক্তব্য, ‘‘এনআইএ-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। ওদের (এনআইএ) এসপি-র ঘরে বিজেপির লোক ঢোকার উচ্চ মানের ভিডিয়ো ফুটেজ সুপ্রিম কোর্টে দেব!’’
সূত্রের খবর, ভোটের মরসুমে এসপি ধনরামের সঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্রের বৈঠকের অভিযোগ ওঠায় বিব্রত এনআইএ। ওই সূত্রের মতে, সোমবারই রাতে ধনরামকে দিল্লি আসতে বলা হয়। তিনি এ দিন সকালে কলকাতা থেকে দিল্লির বিমান ধরেন। তবে পাকাপাকি ভাবে ফিরে আসার পরিবর্তে এই ঘটনাকে রুটিন ডেকে পাঠানো বলেই দাবি করা হয়েছে সরকারি সূত্রে। একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, ধনরামের কিছু রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেই রিপোর্ট জমা দিতেই তিনি দিল্লি এসেছিলেন। সূত্রের দাবি, রিপোর্ট জমা দিয়েই কলকাতা ফিরে গিয়েছেন তিনি। তবে এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি এনআইএ।
কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এই টানাপড়েনে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপিও। তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এ সব শো-বাজি হচ্ছে! তৃণমূল জানে, কিছুই নেই, সব ফাঁকা। তাই মাইলেজ নেওয়ার জন্য এ সব মিডিয়ায় বলে বেড়াচ্ছে।’’ সেই সঙ্গেই এই নিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কাছে তৃণমূল নেতাদের দরবার নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখানে ফুল দেবেন, ওখানে বেলপাতা দেবেন, এই করে নির্বাচনে লড়া যায়? তার জন্য কোর্ট-কাছারি আছে, ব্যবস্থা আছে, চিঠি লিখুন। হয়ে যাবে।’’ এই সূত্রে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপালকে রাজভবন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল দফতরে কিংবা ভবানীপুরে না বেঁধে রাখে! এ সব অসার আস্ফালন! ও দিকে বিজেপির, এ দিকে দিদির আস্ফালন। মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। রাজভবনে বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে বলেছিলেন, গল্প করেছি, কাজের কথা হয়নি। ওখানে চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে। ভোট আসছে আমি এ রকম বলব, তুমি এ রকম বল। যাতে ভোটে বিজেপি এবং তৃণমূলকে নিয়েই আলোচনা হয়।’’
কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘অপব্যবহার’ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেও বিঁধেছে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই এ দিন এসপি ধনরামের ‘বদলি’র কথা সামনে এনে এনআইএ-এর কাজকর্ম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ দাবি করেছে তারা। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এ দিন সকালে এক্স হ্যান্ড্লে ওই ‘বদলি’র কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘এনআইএ সূত্রে জেনেছি, এসপি ডি এন সিংহকে জরুরি ভিত্তিতে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে। পটনা থেকে রাকেশ রোশনকে এনে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, শুধু অফিসারকে সরালেই হবে না। তৃণমূলকে হেনস্থা করতে যে চক্রান্ত করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে।