গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিধান উপেক্ষা করে জরিমানা না দিয়েই বিধানসভার অধিবেশনে যোগদান করলেন দুই তৃণমূল বিধায়ক। সোমবারের পর মঙ্গলবারও অন্য সতীর্থদের মতো বিধানসভার অধিবেশনে যোগদান করেছেন বরাহনগরের বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভগবানগোলার বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকার। এক দিন আগেই দুই বিধায়ককে চিঠি দিয়ে রাজভবনের তরফে তাদের শপথগ্রহণকে অসংবিধানিক অ্যাখ্যা দিয়ে অধিবেশনে যোগদান করলেন দিনপিছু ৫০০ টাকা জরিমানা করার কথা জানানো হয়।
সোমবার চিঠি পাওয়ার পরেই দুই বিধায়কই বিষয়টি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল পরিষদীয় দলকে জানান। সায়ন্তিকা-রেয়াত দু’জনেই রাজভবনের পাঠানো চিঠির কোনও জবাব দেননি। রাজভবনের চিঠিতে যে জরিমানার উল্লেখ করা হয়েছিল, তাও দেননি তাঁরা। মঙ্গলবার আবার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বক্তৃতায়, স্পিকারের কাছে দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ প্রসঙ্গে ‘কনস্টিটিউশন’ (সংবিধান) এবং ‘কনভেনশন’ (রীতিনতি)-এর উল্লেখ করেছেন। তাই নিজেদের অবস্থানের সপক্ষে জোর পেয়েছেন সায়ন্তিকা-রেয়াত।
এ প্রসঙ্গে সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘আমাকে আমার দল বা স্পিকার ওই চিঠির জবাব দিতে নির্দেশ দেয়নি। তাই জরিমানা দেওয়ারও কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের শপথকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সংবিধান এবং রীতিনীতি উভয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। অপর বিধায়ক রেয়াত বলেন, ‘‘বিধায়ক হিসাবে আমার কাস্টোডিয়ান হলেন স্পিকার। তিনি আমাকে রাজভবন থেকে পাঠানো চিঠির কোনও জবাব দিতে বলেননি। জরিমানাও দিতে বলেননি। তাই আমি চিঠির জবাব বা জরিমানা কোনওটাই দিইনি।’’ অন্য দিকে চার বিধায়কের শপথ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিধানসভার সচিবালয় থেকে রাজভবনে চিঠি পাঠানো হলে, পাল্টা রাজভবনে দু’টি প্রশ্নের জবাব চেয়ে পাঠায়। প্রথমটিতে বলা হয়, সায়ন্তিকা-রেয়াতের শপথগ্রহণের বিষয়ে রাজ্যপাল ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে রাজভবন জেনেছে, সেই নির্দেশ মানা হয়নি। এই সংবাদটি কি ঠিক? সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্নে রাজভবন জানতে চেয়েছিল যে, বিধানসভার অধিবেশন ডাকার ক্ষেত্রে অধিবেশন মুলতুবি করার বদলে কেন বার বার ‘আপাতত স্থগিত’ করে দেওয়া হচ্ছে? রাজভবনের এই দুই প্রশ্নেরই জবাব দেয়নি বিধানসভার সচিবালয়।
উল্লেখ্য, সায়ন্তিকা-রেয়াতের পর একই কায়দায় শপথগ্রহণ করেছেন উপনির্বাচনে জয়ী চারজন বিধায়ক। মঙ্গলবার তাদের শপথের পর অবশ্য রাজভবন থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই সায়ন্তিকা-রেয়াতের মতো, অন্য চার জন বিধায়ককে নিয়ে রাজভবনের অবস্থান কী হয় সে দিকেই তাকিয়ে বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। কারণ সোমবার সায়ন্তিকা-রেয়াতের বিধানসভার অধিবেশনে যোগদানের পরেই রাতে এক্স হ্যান্ডলে একটি বিবৃতি জারি করেছিল রাজভবন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘রাজভবনের তরফে ডেপুটি সেক্রেটারি স্পিকারের অফিসকে শপথগ্রহণ সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিধান এবং শপথগ্রহণের সাংবিধানিক যোগ্যতার কথা জানিয়েছেন। যাঁরা সংবিধান মেনে শপথগ্রহণ করেননি, তাঁদের অধিবেশনে যোগদান করলে জরিমানা বাধ্যতামূলক হবে।’’ সঙ্গে আইনের কোন ধারায় রাজভবন এমন কথা স্পিকারকে জানিয়েছেন, তাও এক্স হ্যান্ডলে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৮৮ ধারায় আইনসভার কোনও সদস্য সাংবিধানিক রীতি মেনে শপথ না নিয়ে অধিবেশনে অংশগ্রহণ করলে, যে ক’দিন তিনি অধিবেশনে যোগদান করবেন বা ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন, সেই ক’দিনের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যকে দিনপিছু ৫০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। তাই মনে করা হয়েছিল মঙ্গলবার চার বিধায়কের শপথগ্রহণের পরও রাতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে রাজভবন। কিন্তু রাতে রাজভবন থেকে রাজ্যপালের একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করা হয়। সেই ভিডিয়োতে অবশ্য বিধায়কদের শপথসংক্রান্ত বির্তক নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বোস।