রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র উদয়নারায়ণপুরের এক অনুষ্ঠানে বিধায়ক সমীর পাঁজা। নিজস্ব চিত্র।
সংবাদমাধ্যম তাঁর ফেসবুক পোস্টের ‘অপব্যাখ্যা’ করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ভাবেই নিজের এবং দলের অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা করলেন হাওড়া উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। শুক্রবার রাতে করা তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে হইচই শুরু হয় শাসকদলের অন্দরমহলে। দলে তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করে,‘বিদায়’-বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান। শনিবার সকাল থেকে তাঁকে ফোনে পায়নি সংবাদমাধ্যম। কিন্তু একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়তে থাকেন ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে অরূপ রায়রা। সমীরের ফেসবুক পোস্টে তৈরি হওয়া অস্বস্তি প্রকাশ পেয়েছিল তাঁদের মন্তব্যেও। তবে শনিবার রাতে ফেসবুকে নতুন পোস্ট করে নিজের ‘আমার যাওয়ার সময় হল, দাও বিদায়’ মন্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে বলে দাবি করলেন সমীর।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ‘অভিমানী’ বিধায়কের সঙ্গে এক রাজ্য নেতা কথা বলেছেন। সঙ্গে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরুণাভ সেনের সঙ্গেও কথা হয় সমীরের। তারপরেই দীর্ঘ পোস্ট করেন তিনি। সমীর লেখেন, ‘গতকাল রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমি আমার অন্তরের, আবেগের কিছু কথা পোস্ট করেছিলাম। লেখার মধ্যে এমন কিছু ভাষা প্রয়োগ করিনি, যেখানে আমাদের দল ও নেত্রীকে বিড়ম্বনায় বা অস্বস্তিতে পড়তে হবে। কিন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এক শ্রেণির মিডিয়া তার অপব্যাখ্যা করছে, যা হাস্যকর।’
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে সমীরবাবুর কথা হয়েছে। আবেগ থেকে কিছু লিখে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। আর কোনও সমস্যা নেই।’’
সমীর তাঁর দ্বিতীয় পোস্টে আরও লেখেন, ‘...আজও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথই আমার পথের পাথেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন আছেন, তাঁর আদর্শকে বুকে আগলে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক হিসেবে ছিলাম, আছি, থাকব।’ শনিবারের পোস্টে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির ব্যবহার করেছিলেন তিনি, রবিবার সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করে যে পোস্টটি সমীর করেছেন, তাতেও মমতার ছবির ব্যবহার করা হয়েছে।
শুক্রবারের পোস্টেও অবশ্য দলনেত্রীকে সম্মান জানিয়েই ‘বিদায়’ চেয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। লিখেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার এই মহান নেত্রী আছেন বলেই, আমি আজও তৃণমূল দল ছেড়ে যাইনি। কারণ কত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে, নানান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ৩৮টা বছর মহান এই নেত্রীর সঙ্গে এক জন সৈনিক হিসাবে কাজ করতে করতে এখন বড়ই বেমানান লাগছে নিজেকে। কারণ আজ অবধি মিথ্যা নাটক করে দলীয় নেতৃত্বের কাছে ভাল সেজে একটা মেকি লিডার হতে চাই না আমি। আমার মতো অবিভক্ত যুব কংগ্রেসের আমল থেকে যারা আছে, তারা আদৌ কোনও গুরুত্ব পাচ্ছে কি বর্তমানে?... আমার যাওয়ার সময় হল, দাও বিদায়!’
রবিবারও সুর বদলানো বিধায়কের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।