বাঁ দিকে জাহানারা খান ও ডান দিকে নার্গিস বেগম।—ফাইল চিত্র
বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক জাহানারা খানের প্রতি অশ্লীল মন্তব্য করার জন্য ভর্ৎসিত হলেন তৃণমূল বিধায়ক নার্গিস বেগম। অধিবেশনে ক্ষমাও চাইতে হল তাঁকে। তাঁর মন্তব্য সভার নথি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দলীয় বিধায়ককে কড়া ভাষায় নিন্দা করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিধানসভায় শনিবার বাজেট বিতর্কে বক্তৃতা করতে ওঠেন নার্গিস। তখন দেখা যায়, মন্ত্রী অসীমা পাত্র তাঁকে কিছু বলছেন। নার্গিস তখন বলে ওঠেন, ‘‘আগে বক্তৃতা করে নিই, পরে ওদের গালিগালাজ করব।’’ জাহানারা নিজের আসন থেকে বলেন, ‘‘যাঁর যেমন সংস্কৃতি, তাঁর তেমন ভাষা। ছোটবেলার শিক্ষা আমরা ভুলতে পারি না।’’ এ কথা শুনেই জাহানারাকে নিশানা করে নার্গিস একটি অশ্লীল মন্তব্য করেন।
সেই সময় স্পিকারের আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা। নার্গিসের ওই মন্তব্য মাত্র পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বিরক্ত হয়ে সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষকে কিছু বলতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে নির্মলবাবু নার্গিসকে কিছু বলেন। নার্গিসের বক্তৃতার পরে অধিবেশনের প্রথমার্ধ শেষ হলে বিরতিতে স্পিকারের ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জাহানারা। নার্গিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন তিনি। স্পিকারের ঘর থেকে বেরনোর সময় কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। ফিরহাদ এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু তাঁকে বলেন, ‘‘আমরা নার্গিসের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাদের দল এই মন্তব্য সমর্থন করে না। দেখছি, কী করা যায়।’’ জাহানারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উপযুক্ত বিচার না পেলে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব।’’
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বিষয়টি সম্পর্কে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নার্গিসের কড়া শাস্তির দাবি জানান। পার্থবাবু তখন বলেন, ‘‘সভায় এমন কিছু শব্দ ব্যবহার হচ্ছে, যা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমরা কীসের জনপ্রতিনিধি? নীতি, মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে এমন কাজ করব না, যাতে সভার গরিমা এবং সুস্থ সংস্কৃতি ক্ষুণ্ণ হয়। আমাদের কোনও বিধায়ককে অন্য বিধায়কের প্রতি অপমানজনক শব্দ উচ্চারণ করার অনুমোদন দল দেয় না। নার্গিস বেগম ওই শব্দ প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ করুন।’’ স্পিকারও বলেন, ‘‘আমাদের আচরণ এবং শব্দচয়নে যেন সংযম থাকে।’’ নার্গিস বলেন, ‘‘আমার মুখ ফস্কে যে কথা বেরিয়েছে, তাতে কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে আমি হাতজোড় করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছি।’’