বাঁ দিকে জাহানারা খান ও ডান দিকে নার্গিস বেগম।—ফাইল চিত্র
রাজ্য বাজেটের উপর বিধানসভায় বিতর্ক। তা নিয়ে তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন শাসক ও বিরোধী দলের দুই মহিলা বিধায়ক। বইল কুকথার স্রোত। শনিবার এমনই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল বিধানসভা। জামুড়িয়ার সিপিএম বিধায়ক জাহানারা খানকে নিশানা করে বিধানসভায় কুমন্তব্য করে বসলেন মেমারির তৃণমূল বিধায়ক নার্গিস বেগম। পরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন নার্গিস। কিন্তু তাতে শাসকদলের অস্বস্তি অবশ্য ঢাকা পড়েনি।
এ দিন বিধানসভায় আলোচনা শুরু হয়েছিল সদ্য পেশ হওয়া রাজ্য বাজেট নিয়ে। তা নিয়েই বলছিলেন মেমারির তৃণমূল বিধায়ক নার্গিস বেগম। ঠিক সে সময়েই জামুড়িয়ার বাম বিধায়ক জাহানারা খান অভিযোগ তোলেন, বাজেটে মহিলাদের নিরাপত্তার দিকে কম নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। দুই মহিলা বিধায়কের মধ্যে বাগযুদ্ধের শুরু এ থেকেই। এর পরই ধৈর্য হারিয়ে জাহানারাকে কুমন্তব্য করে বসেন নার্গিস।
নার্গিসের অশালীন মন্তব্যে বিধানসভা জুড়ে তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায়। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করতে থাকেন বিরোধী শিবিরের বিধায়করা। এক মহিলা বিধায়ককে অন্য মহিলা বিধায়কের এমন কটূ মন্তব্যে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক দল তৃণমূলও।
আরও পড়ুন: হাইওয়েতে গাড়ি-বদল, স্পিডোমিটারের তার খোলা, পোলবায় গতিই ডেকে এনেছিল দুর্ঘটনা
নার্গিস যখন বিধানসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে জাহানারাকে বেলাগাম আক্রমণ করেছেন তখন স্পিকারের চেয়ারে বসেছিলেন ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা। নার্গিসের আচরণ নিয়ে তাঁর কাছে বার বার অভিযোগ জানাতে থাকেন জাহানারা। কিন্তু শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় তা শুনতে পাননি ডেপুটি স্পিকার। ফলে তেমন ভাবে গুরুত্বও দেননি তিনি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন জাহানারা খান। তিনি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে বিষয়টি তোলেন। স্পিকারের কাছে নার্গিসের কুমন্তব্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।’’ প্রয়োজনে তিনি নার্গিসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন। এর পরেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্ত জমাট, এখনও ভেন্টিলেশনে পোলবার দুই খুদে পড়ুয়া
শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বিতর্কে ইতি পড়ে। তাঁর নির্দেশে বিধানসভাতেই ক্ষমা চান তৃণমূল বিধায়ক নার্গিস বেগম। বাম বিধায়ক জাহানারার কাছেও ক্ষমাও প্রার্থনা করেন তিনি। একই সঙ্গে স্পিকারের নির্দেশে নার্গিসের ওই কুমন্তব্য বিধানসভার কার্য বিবরণী থেকেও বাদ দেওয়া হয়। নার্গিসের বিরুদ্ধে স্পিকার ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফেরে ট্রেজারি বেঞ্চেও। স্পিকারের পদক্ষেপে বিতর্কের তীব্রতা কিছুটা কম হলেও, এই ঘটনা বিধানসভায় নতুন নজির তৈরি করল।