বিধানসভা ভবনে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। — নিজস্ব চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভা ভবনে এলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। বিধানসভা ভবনে এসে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁর কাছে বিধায়ক হিসাবে আবার কাজ শুরু করার আবেদন জানান জীবন। স্পিকার অনুমতি দিলে বিধানসভার দু’টি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগদান করেন তিনি। সাংবাদিকদের জানান, অনেক দিন পর বিধানসভায় ফিরে ভাল লাগছে।
মঙ্গলবার জীবনকৃষ্ণকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে যান বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। তাঁকে সেখানে স্বাগত জানান আমডাঙ্গার বিধায়ক রফিকুর রহমান ও চাঁচলের বিধায়ক নীহার ঘোষ। এর পরেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন জীবন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘স্পিকারের সঙ্গে দেখা করলাম। কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। জামিনের অর্ডার, কাগজপত্র জমা করলাম। মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে যে নির্দেশ দিয়েছে, তা জমা করলাম।’’ এর পর স্পিকারের থেকে অনুমতি পেয়ে উচ্চ শিক্ষা এবং বিধায়ক সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগদান করেন জীবন। এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অনেক দিন পর বিধানসভায় এসেছি। ভাল লাগছে। স্পিকারের কাছে কাজ শুরুর অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি দিয়েছেন। দুটো বৈঠকে যোগ দিয়েছি।’’
অভিযোগ ছিল, বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির সময় পুকুরে মোবাইল ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন জীবন। সত্যিই কি তা করেছিলেন? বিধানসভা থেকে বার হলে আবার সেই প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে জীবন স্পষ্ট বলেন, ‘‘বিষয়টি কোর্টের বিচারাধীন। এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কোর্টের রায় যা হবে, মাথা পেতে নেব। বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে।’’ জীবনের সেই মোবাইল পুকুর ছেঁচে উদ্ধার করেছিল সিবিআই। তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য মিলেছিল বলেও জানিয়েছিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার তবে কার মোবাইল নিয়ে এসেছেন বিধানসভা ভবনে? জীবন বলেন, ‘‘এখন স্ত্রীর মোবাইল নিয়ে এসেছি। কাজ চালানোর জন্য।’’ তার পর আবার তিনি বলেছেন, ‘‘বিধায়ক হচ্ছেন আইনসভার সদস্য। আইন মেনে কোর্ট যা রায় দেবে, মাথা পেতে নেব। মোবাইল নিয়ে কিছু বলব না।’’ যদিও এর আগে বিভিন্ন সময়ে জীবন দাবি করেছিলেন, মোবাইল পুকুরে তিনি ফেলেননি। তাঁর কাছে সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। সব প্রমাণ দিয়ে দেবেন তিনি। জামিন পাওয়ার পর প্রকাশ্যে বার বারই জানিয়েছেন, এই নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তিনি কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার? জবাবে জীবন বলেন, ‘‘সময় কথা বলবে।’’
২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল জীবনকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। জামিনের আবেদন নিয়ে তিনি প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে বিধায়কের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তার পরেই জামিন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জীবন। সুপ্রিম কোর্ট তৃণমূল বিধায়ককে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন পাবেন জীবন। আদালতের নির্দেশ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যেতে পারবেন না। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার প্রতিটি শুনানিতে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে। এই মামলার ক্ষেত্রে কাউকে কোনও হুমকি দেওয়া যাবে না। প্রমাণ লোপাট করা যাবে না। আদালতে তাঁকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।