(বাঁ দিকে) ফিরহাদ হাকিম। সিভি আনন্দ বোস। —নিজস্ব চিত্র।
উপনির্বাচনে জিতেও বিধায়কপদে শপথ নিতে পারছেন না তৃণমূলের সদ্যজয়ী দুই প্রার্থী। আর সেই কারণে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে দায়ী করে আক্রমণ শানালেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সোমবার প্রথমে বরাহনগরে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে ভগবানগোলায় তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী রায়াত হোসেন সরকার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তাঁরা স্পিকারকে জানিয়ে দেন, ২৬ জুন রাজভবনে তাঁদের শপথগ্রহণের জন্য ডাকা হলেও তাঁরা সেখানে যাবেন না। বরং বিধানসভাতেই তাঁরা শপথ নিতে বেশি আগ্রহী। তাঁদের যেন শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার স্বয়ং। নিজেদের দাবির কথা জানিয়ে প্রথমে সায়ন্তিকা এবং পরে রায়ত হোসেন রাজভবনে চিঠি পাঠিয়েছেন। সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশে বিধানসভায় আসেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ।
স্পিকারের ঘরে সদ্যজয়ী দুই বিধায়ক-সহ ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ। বৈঠক শেষে রাজ্যপালকে নিশানা করে রাজ্যের পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি নিজে উপনির্বাচনে জিতে বিধানসভার সদস্য হয়েছিলাম ২০০৯ সালে। শপথগ্রহণের বিষয়ে আমাদের জানারও কথা ছিল না। তখনকার স্পিকার রাজ্যপালের থেকে অনুমোদন নিলেন। তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম একটি নির্দিষ্ট দিন ধার্য করলেন উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আট-নয় দিন পরে। নির্দিষ্ট দিনে আমরা এসে শপথগ্রহণ করলাম। বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কিন্তু এখন প্রত্যেক বার স্পিকারের অধিকার খর্ব করে, নির্বাচনী পদ্ধতিকে অবমাননা করে শুধু গায়ের জোরে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্যপাল কাজ করছেন। এই রাজ্যপালের তো চরিত্রের ঠিক নেই। নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর আমি ওঁর জায়গায় থাকলে এত দিনে পদত্যাগ করতাম।’’ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরের অভিনেতা তথা তৎকালীন বিধায়ক তাপস পাল কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূলের টিকিটের সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র পান। সাংসদ হয়ে গেলে আলিপুরের বিধায়কপদ ছেড়ে দেন তাপস। সেই আসনে উপনির্বাচন হলে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে অধুনাবিলুপ্ত আলিপুর বিধানসভা থেকে উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন ফিরহাদ। যদিও ২০১১ সালে তাঁকে কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে পাঠানো হলে সেখান থেকে পর পর তিন বার জিতে বিধায়ক হয়েছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রাজ্যপালকে সোমবার কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন কলকাতা বন্দরের বিধায়ক।
দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ ঘিরে জটিলতা প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘দু’জন সদস্য মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। আর রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা মনোনীত হয়ে এখানে এসেছেন। আমাদের দর বাজারে অনেক বেশি। কারণ, আমরা জনতার মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। স্পিকারও জনতার ভোটেই জিতে এখানে এসেছেন। বিধায়কদের শপথগ্রহণ করানো তাঁর অধিকার। আমরা বিধায়কেরা স্পিকারের সান্নিধ্যে থাকব— এটাই বিধানসভার নিয়ম।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন করেছে। কে রাজ্যপাল? কিসের রাজ্যপাল? মানুষের রায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারও অধিকার নেই। উপনির্বাচনে জয়ের পর শপথগ্রহণ নিয়ে কখনও আমাদের ভাবতে হয়নি। এই বিজেপি সরকারের আমলে এই সব ঘটনা ঘটছে। একটা সংখ্যালঘু সরকার, যারা অন্যদের উপর নির্ভর হয়ে চলছে, সেই দলের দালালের এত ক্ষমতা কোথা থেকে আসে?’’
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলঘোষণা হয়েছে। বরাহনগর কেন্দ্রে সায়ন্তিকা এবং ভগবানগোলা কেন্দ্রে রায়াত হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। দু’জন নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ককে ২৬ জুন রাজভবনে ডেকেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু সোমবার সায়ন্তিকা ও রায়াত হোসেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই রাজভবনে শপথ নিতে যাবেন না। দু’জনেই রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর।