পঞ্চায়েত ভোটের মুখে শোরগোল ফেলেছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত। প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে বিরোধীরা দখল করেছে নন্দকুমারের বহরমপুর সমবায়। বাম-বিজেপি হাত ধরাধরি করে ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’ গড়ে ৬৩টি আসনের সবগুলিতেই হারিয়ে দিয়েছে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার জেলায় এমন সমীকরণ তাই পঞ্চায়েত ভোটের মুখে শোরগোল ফেলেছে।
সমবায় ভোট একেবারেই স্থানীয় স্তরের ও অরাজনৈতিক নির্বাচন। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে নিচুতলায় বিরোধীদের এ ভাবে জোট বাঁধা ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জেলা সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘বিজেপি ও বামেদের সঙ্গে আরও কেউ কেউ হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইছে ঠিকই, তবে এর পুনরাবৃত্তি কোথাও হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে এখন বিষমুক্তি প্রক্রিয়া চলছে। তা সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের জয় সুনিশ্চিত হবে।’’
কয়েক দিন আগে তমলুক ব্লকের পুতপুতিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনেও ১২টি আসনে লড়েছিলেন বিরোধী জোটের প্রার্থীরা। সে ভোটে অবশ্য ৭টি আসনে জেতেন তৃণমূল সমর্থিতেরা। তবে তখনও তমলুকের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘বিজেপি ও বামফ্রন্ট জোট বেঁধে লড়াই করেছিল।’’ উল্লেখ্য, ওই এলাকার শ্রীরামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূল জিতলেও ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ফল আশানুরূপ হয়নি।
নন্দকুমারের চকশিমুলিয়া পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। তবে এখানকার বহরমপুর সমবায় এর আগে বামেদের দখলে ছিল। আর এ বার ৬৩টি আসনের মধ্যে ৫২টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল-বিরোধীরা। বাকি ১১টিতে ভোট হয় রবিবার। দেখা যায়, সব ক’টিতেই জিতেছেন বিরোধী জোটের প্রার্থীরা। ফলে, আশঙ্কা কি একটা থাকছে?
তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, ২০১৬ সাল থেকেই বামেরা তাদের ভোট বিক্রি করেছে। কখনও কংগ্রেস, আবার কখনও বিজেপিকে ভোট বিক্রি করেছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের বিরুদ্ধে হাত-হাতুড়ি-পদ্ম এক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আমরা স্থানীয় নেতৃত্বকে সতর্ক করে দিয়েছি।’’ জোট বাঁধার সম্ভাবনা অবশ্য নস্যাৎ করে দিচ্ছে বাম-বিজেপি দু’পক্ষই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোমবার মালদহে বলেন, ‘‘সমবায় ভোটে প্রতীকে ভোট হয় না। নামে ভোট হয়। জোটের কোনও বিষয় নেই।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘বামপন্থীরা কখনওই বিজেপির সঙ্গে যায়নি। বরং তৃণমূল গিয়েছে। আর সমবায়ে তৃণমূলের লুটেরা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের জোট হয়েছে। আমাদের লোকেরাও সেখানে আছেন।’’ তবে দলীয় ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সুজন।