সন্ধ্যা ৬টা। ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এক যুবক ফোনে বলছেন, ‘‘এই তোর হোয়াটস্ অ্যাপে একটা লিঙ্ক পাঠিয়েছি তাড়াতাড়ি দেখ। তৃণমূল নেতামন্ত্রীরা কী ভাবে টাকা নিচ্ছে তার ছবি।’’ মিনিট দশ পর ফের ওই যুবক ফোন করে। তখন তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কলেজে তো খুব বড় মুখ করে বলতিস, মমতা সততার প্রতীক। তাঁর দলের সততার ছবি তো সামনে চলে এল!’’
সোমবার সকালে টিভির পর্দায় নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ দেখা মাত্রই বাসে, অটোতে, চায়ের দোকানে, ট্রেনে, বাজার-হাটে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের টাকা নেওয়ার ফুটেজ দেখার পর থেকেই মুখে একপ্রকার কুলুপ এঁটেছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। এই দৃশ্য দেখার পর থেকেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরাও যথেষ্ট হতাশ।
ক্যানিঙের এক যুবক সৌরভ মণ্ডল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি দেখে মানুষ ভেবেছিল এই সরকারের আমলে মানুষের উন্নতি হবে। কিন্তু কোথায় কী, তৃণমূলের আমলে সারদার মতো এত বড় একটা কাণ্ড হল। এরপর টিভিতে যে ভাবে নেতামন্ত্রীদের টাকা নেওয়া দেখানো হল, তাতে আর কোন মুখে ওরা ভোট চাইবে, জানি না।’’ বনগাঁর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এতদিন আমরা টিভিতে দেখতাম অন্য রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা ঘুষ কাণ্ডে জড়িয়েছেন। আমাদের রাজ্যেও তা ঘটবে ভাবতেই পারছি না।’’ জেলার এক তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়কের কথায়, ‘‘কী আর বলব। এখন মুখ বন্ধ করেই থাকা ভাল।’’ জেলার অনেক তৃণমূল নেতাকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। বাসন্তীর এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘সারদা কাণ্ড এখনও পিছু ছাড়েনি। তার মধ্যে আবার এমন একটা ঘটনা সামনে এল।’’ নারদের এই ভিডিও প্রসঙ্গে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘নারদ নিউজের স্টিং অপারেশন বুঝিয়ে দিল এই সরকার কতটা অস্বচ্ছ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবেন।’’ ভোটের প্রচারেও তাঁরা বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ভোট স্থগিত রাখার দাবি করেছি। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ঘটনার তদন্ত করা হোক।’’ এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য নিশিত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন থেকে ফোনে ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা ঘটনার কথা প্রচার করা শুরু করেছি। শীঘ্রই আমরা পথে নামব।’’ সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা সোশ্যাল মিডিয়া টিম সদস্য তথা ডিওয়াইএফআই কাকদ্বীপ জোনাল সভাপতি সুমন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা ভিডিওটা দেখে আশ্চর্য হয়েছি। জন প্রতিনিধিরা এ ভাবে টাকা নিলে মানুষ কোথায় দাঁড়াবে? এই ছবিগুলি দিয়েই প্রচার চালাব তরুণ প্রজন্মের কাছে।’’
তবে তৃণমূলের কর্মী নেতারা কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা। তবে ভোটের আগে তাঁদের যে বিষয়টি একটা বড় ধাক্কা তা গোপনে মানছেন সবাই।