রামের টক্করে হনুমান ভরসা তৃণমূলেরও

রামভক্ত নানা সংগঠনের বাৎসরিক রেওয়াজ ছিলই। ভয়ে হোক বা ভক্তিতে, এ বার হনুমানের আরাধনায় ঘটা করে সামিল তৃণমূলও! রামনবমীর সশস্ত্র উদযাপন করে বিজেপি যখন রাজ্য রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছে, তখনই হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে হনুমান পুজোয় মন দিয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

ভক্তি: উল্টোডাঙায় এক হনুমান পুজোর উদ্বোধনে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

রামভক্ত নানা সংগঠনের বাৎসরিক রেওয়াজ ছিলই। ভয়ে হোক বা ভক্তিতে, এ বার হনুমানের আরাধনায় ঘটা করে সামিল তৃণমূলও!

Advertisement

রামনবমীর সশস্ত্র উদযাপন করে বিজেপি যখন রাজ্য রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছে, তখনই হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে হনুমান পুজোয় মন দিয়েছে তৃণমূল। আজ সকালেই ‘জয় বজরংবলী’ বলে টুইট করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল প্রথম তাঁর জেলায় রামনবমীর দিনেই হনুমানের বন্দনার কথা বলেছিলেন। তার পরে তা দ্রুত ছ়ড়িয়ে পড়েছে নানা জেলা এবং খাস কলকাতাতেও। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এমনি এমনিই হনুমান পুজো হচ্ছে। কিন্তু বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা এর পিছনে গভীর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে সঙ্ঘ পরিবারের হরেক সংগঠন পাছে সংখ্যাগুরু ভাবাবেগের সম্পূর্ণ ফায়দা তুলে নেয়, সেই ভয়েই এখন বজরংবলীর দ্বারস্থ হতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে!

উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙায় মঙ্গলবার যেমন ২৫ ফুটের প্রকাণ্ড হনুমান মূর্তির উন্মোচন ঘটিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ঘটা করে নারকেল ফাটিয়ে, আরতি করে, ‘জয় বজরংবলী’ ধ্বনি দিয়ে কোনও আচারে ফাঁক রাখেননি প্রবীণ তৃণমূল নেতা! আট বারের বিধায়ককে এ ভাবে প্রকাশ্যে হনুমান জয়ন্তী পালন করতে হচ্ছে কি পরিস্থিতির চাপে? সাধনবাবুর দাবি, ‘‘রাম সত্যের প্রতীক, ন্যায়ের প্রতীক। কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের নয়। রামভক্ত হনুমানও বীরত্বের প্রতীক। আমি রোজ বাড়িতে বজরংবলীর পুজো করি। তার থেকে শক্তি পাই।’’ তৃণমূল শিবিরেই গুঞ্জন, রামভক্তদের মোকাবিলায় এখন বেশি বেশি ‘শক্তি’ দরকার হচ্ছে বলেই এমন হনুমান আরাধনা! উল্টোডাঙার অনুষ্ঠানে ছিলেন বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউত, কাউন্সিলর শান্তিরাম কুণ্ডু-সহ তৃণমূলের আরও কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

আরও পড়ুন:হনুমান উৎসবেও গেরুয়া তাণ্ডব

হনুমানে ভক্তি প্রদর্শনের দৌড়ে ছিলেন আর এক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। কাঁথিতে একটি সংগঠনের হনুমান জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সোমবার উপস্থিত ছিলেন তিনি এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। নেতা-মন্ত্রীরা ছাড়াও সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক মহলে হনুমান জয়ন্তীর উন্মাদনা চোখে পড়েছে এ দিন। উদাহরণ, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কোথাও অটো, কোথাও টোটো চালকদের ইউনিয়ন হনুমানের ছবি রেখে পথচলতি লোকজনের মধ্যে ঠান্ডা শরবত, প্রসাদ বিলি করেছেন। ওই এলাকায় ওই সব ইউনিয়নই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন প্রভাবিত।

তৃণমূলের হাবভাব দেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, ‘‘কেন্দ্র রাম হয়েছে। আর তার অনুগত হনুমান সাজছে রাজ্য সরকার!’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপি সাধারণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে উত্তেজিত করে ধর্মীয় হানাহানির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনে ফায়দা তোলার জন্য।’’ তাঁর আহ্বান, ধর্মীয় আবেগের আড়াল সরিয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর’ নেতাদের শাস্তির দাবিতে গর্জে উঠতে হবে। তৃণমূল-বিজেপি মৌলবাদের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement