রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র ।
রেশন বণ্টনে দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে গ্রেফতার করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কলকাতায় ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে জোকার উদ্দেশে রওনা দেন ইডি আধিকারিকরা। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোনোর সময় বালু (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাকনাম) আবারও বললেন, চক্রান্তের কথা। মন্ত্রী জানান, তিনি চক্রান্তের শিকার। যে চক্রান্তের নেপথ্যে বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে জোকা যাওয়ার সময় জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। বিজেপি এবং শুভেন্দু অধিকারী চক্রান্তে জড়িত।’’
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করে ইডি দফতরে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কথা। সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। শুধু এটুকুই বলে গেলাম, ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে। তারা আমাকে শিকার করল।”
জোকা ইএসআই থেকে বেরোনোর সময়ও একই কথা গেল শোনা গেল মন্ত্রীর মুখে। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘যা করার শুভেন্দু করেছে।’’
বৃহস্পতিবার ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ম্যারাথন তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। রেশন বণ্টন মামলায় এই প্রথম কোনও মন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৩টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে এ বিষয়ে ইডির কোনও আধিকারিক কোনও মন্তব্য করেননি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি তাঁর দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) চলেছে তল্লাশি। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয়ের। বৃহস্পতিবার বেনিয়াটোলায় জ্যোতিপ্রিয়ের পৈতৃক বাড়িতেও পৌঁছে যান ইডির আধিকারিকেরা। বেনিয়াটোলা লেনের এই বাড়িতে অবশ্য মন্ত্রী এখন থাকেন না। তাঁর আত্মীয়েরা থাকেন। ইডির আধিকারিকদের একটি দল সেই বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাতে শুরু করে।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি ওই সময়েই তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দে-র নাগেরবাজারের দু’টি ফ্ল্যাটেও পৌঁছে যায় ইডি। একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। সূত্রের খবর, দু’টি ফ্ল্যাটেই পালা করে অমিত থাকেন। তবে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ ছিল। অমিতকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর সন্ধান শুরু করেন ইডির আধিকারিকেরা। বেলা গড়ালে দেখা যায়, ইডির একটি দল পৌঁছেছে বেলেঘাটায় মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক অমিতের বন্ধু রনির বাড়িতেও। বিকেলে জ্যোতিপ্রিয়ের আপ্তসহায়ক অমিত সপরিবারে বাড়ি ফিরে আসে। অমিতের সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রবীণা মা, স্ত্রী এবং সন্তান।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে বৃহস্পতিবার তল্লাশি চলাকালীন বাইরে ভিড় করতে দেখা গিয়েছিল বহু মানুষকে। তাঁদের সরাতে থানায় যোগাযোগ করেন ইডি আধিকারিকেরা। থানা থেকে পুলিশকর্মীরা এসে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির ভিতরে ঢুকে কথা বলেন ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে। তার পরেই বাইরে বসানো হয় ব্যারিকেড। এর পর রাত ৩টে নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে সিজিও দফতরে নিয়ে যায় ইডি।