তৃণমূলের অনুগত কর্মী হিসাবেই কাজ করে যেতে চান অর্জুন সিংহ। ফাইল চিত্র।
তিনি দলের সঙ্গেই রয়েছেন। তৃণমূলের অনুগত কর্মী হিসাবেই কাজ করে যেতে চান। ব্যারাকপুরে ডাকাতির ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুর পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নাগাড়ে প্রশ্ন তোলার পরে এমনটাই দাবি করলেন খাতায়-কলমে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। শুক্রবার রাতে এই মর্মে ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দিতে একটি বার্তা দিয়েছেন অর্জুন। লিখেছেন, ‘‘আবারও বলছি, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক জন অনুগত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক, দলের সঙ্গে আছি এবং থাকব।’’
বুধবার রাতে ব্যারাকপুরে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। বাধা দিতে গিয়ে নীলাদ্রি সিংহ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। জখন হয়েছেন আরও দু’জন। এর পরেই বৃহস্পতিবার থেকে সরব হন অর্জুন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও। এর পরেই তৃণমূলের পক্ষে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়ে দেন, ওই মন্তব্যের পাশে নেই দল। কুণাল বলেন, ‘‘কোনও অনভিপ্রেত ঘটনাকে সমর্থন করা যায় না। তবে দলের এক জন প্রবীণ নেতা হিসাবে অর্জুন সিংহেরও বিরোধীদের সুরে মন্তব্য করা ঠিক নয়।’’ জবাবে অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘দল কিছু ভাবতে পারে। কিন্তু আমাকে তো মানুষ নির্বাচিত করেছে! আমায় তো মানুষের কথা বলতে হবে। তাদের নিয়েই চলতে হবে। আর ভুল তো কিছু বলিনি। যা বাস্তব সেটাই তো বলছি।’’
এর পরে শুক্রবারও তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেখানে নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিতে লজ্জা হয়!’’ আক্ষেপের সুরে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এ দিকে আমি নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’’ দলকে লাগাতার ‘অস্বস্তি’তে ফেলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইন শুক্রবার বিকেলে একটি খবর প্রকাশ করে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়, অর্জুন কি তবে বিজেপির দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, অর্জুন-পুত্র পবন সিংহ এখন বিজেপির বিধায়ক।
বিকেল ৪টে ১৮ মিনিটে এই খবর প্রকাশের পরে চুপই ছিলেন অর্জুন। রাত সওয়া ৯টা নাগাদ তিনি ৩টি ভাষায় বিবৃতি দেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আনন্দবাজার অনলাইনে খবর প্রকাশের পরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অর্জুনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে অর্জুন নিজের উদ্বেগের ব্যাখ্যা দেন। এর পরেই এই টুইট। যেখানে আনন্দবাজার অনালইনে প্রকাশিত খবরের উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, তাঁর সংসদীয় এলাকার ঘটনা তাঁকে হতবাক করেছে। সেই কারণেই পুলিশ, প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন। অর্জুন ওই বিবৃতিতে নিজেকে ‘তৃণমূলের প্রথম দিন থেকে লড়াকু সংগঠক’ বলে দাবি করেছেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া বা তৃণমূলকে হারিয়ে সাংসদ হওয়ার কথা লেখেননি। তৃণমূলের টিকিটে তাঁর জেতা বিধানসভা আসন ভাটপাড়া থেকে পুত্র পবনকে বিজেপির টিকিটে জেতানোর কথাও উল্লেখ করেননি। লিখেছেন, ‘‘বাইরে থেকে অপরাধীদের এনে ব্যারাকপুরকে অশান্ত করা হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসনকে এই ধরনের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয় বলেও জানিয়েছেন অর্জুন।
তৃণমূলের পক্ষেও এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। রাজ্য তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, ‘‘অর্জুন যা যা মন্তব্য করেছেন তা এটা বোঝানোর জন্য যে, পুলিশের উচিত নিরপেক্ষ থাকা। এর পিছনে প্রশাসন বা দলকে কটাক্ষ করা হয়েছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।’’