অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা গোলাম জার্জিস। — নিজস্ব চিত্র।
সিন্ডিকেটের নামে জুলুম বা তোলাবাজির অভিযোগের সঙ্গে আগেও নাম জড়িয়েছে শাসকদলের। এ বার দলেরই এক নেতার কাছে তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের আর এক নেতার বিরুদ্ধে। ব্যবসা করতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে, লোক পাঠিয়ে বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস তাঁর কাছে এই দাবি করেছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি শেখ সুরমান আলির।
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম জার্জিস অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেন, ‘‘সংগঠনকে দুর্বল করতে কেউ-কেউ মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’ বস্তুত, এই অভিযোগের পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখছে জেলা তৃণমূলের একাংশও। বর্ধমানের শক্তিগড়ে গোলাম জার্জিস ও সুরমান আলির মধ্যে বিবাদ অনেক দিনের। এর আগেও সুরমানকে রাস্তায় মারধরের অভিযোগ উঠেছিল গোলামের বিরুদ্ধে। এ বার ভোটে ভাল ফলের পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও বর্ধমানে দলের কোন্দল যে থামছে না, তোলা চাওয়ার এই অভিযোগের পরে তা ফের সামনে এসে পড়ল বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
স্থানীয় সূত্রেও জানা যাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ে তৃণমূলের বিজয় মিছিল নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, বোমাবাজি হয়। গোলামের অনুগামী ও তাঁদের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যেই গোলমাল বাধে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তার পরেই রাতে বর্ধমান থানায় গোলামের বিরুদ্ধে তোলা চাওয়ার অভিযোগ জানান সুরমান। তাঁর অভিযোগ, অসমের চা নানা জায়গায় সরবরাহ করার জন্য শক্তিগড়ে তিনি একটি গুদাম তৈরি করছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জনা দশেক যুবক তাঁর কাছে গিয়ে দাবি করে, গোলাম জার্জিস তাদের পাঠিয়েছেন। এই এলাকায় চায়ের ব্যবসা শুরু করতে হলে তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। সুরমানের দাবি, ‘‘আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করে হুমকি দিয়ে চলে যায় ওই যুবকেরা। শুধু আমি নয়, গোটা শক্তিগড় এলাকাই গোলাম জার্জিসের এমন আচরণে অতিষ্ঠ।’’ ঘটনাটি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। দলের বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ যদিও বলেন, ‘‘এমন ঘটনার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
গোলাম জার্জিসের পাল্টা দাবি, শক্তিগড়ে দলের সংগঠন শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করিয়েছেন তাঁরাই। তাতে ফাটল ধরাতে এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগ করছেন সুরমান। জার্জিসের অভিযোগ, ‘‘চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছিল বলে জনতা ওঁকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেছিল। এখন আবার এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার পরিজনদের গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিচ্ছে সুরমান। আমিও দলীয় নেতৃত্ব ও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।” যা শুনে সুরমানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাকে দলে কোণঠাসা করতে এ সব কথা বলা হচ্ছে।’’
তোলাবাজির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল।