অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও নেতাদের একাংশের প্রতি হুঁশিয়ারির বার্তা শোনা গিয়েছে। — ফাইল চিত্র।
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরেই লোকসভা ভোট। তার আগে কড়া হাতে সংগঠনের রাশ ধরতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কালীঘাটে দলের বৈঠকে সেই কঠোর বার্তাই তিনি দিয়েছেন নেতাদের। তাঁর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও নেতাদের একাংশের প্রতি হুঁশিয়ারির বার্তা শোনা গিয়েছে। কোন কোন নেতা ঠিকঠাক দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না, তার রিপোর্ট দলের কাছে রয়েছে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন অভিষেক। একই সঙ্গে সেই নেতাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও নিজের বক্তব্যে উল্লেখ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তৃণমূলে অভিষেকের গুরুত্ব যে এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্য সরকার পরিচালনাতেও গুরুত্ব বাড়ছে তাঁর। জনতার সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীদেরও সরাসরি নির্দেশ দিতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তেমনই আবহে শুক্রবার দলীয় বৈঠকে তিনি ‘ফাঁকিবাজ’ নেতাদের সতর্ক করেন। শুক্রবারের বৈঠকে তৃণমূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ তথা ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হবে। সেই প্রসঙ্গেই অভিষেক বলেন, অনেকেই মনোযোগ দিয়ে ওই কর্মসূচি করছেন না। পার্টিটা তো সকলের! কর্মসূচি মনোযোগ দিয়ে করলে পঞ্চায়েত ভোটে এর ভাল প্রভাব তাঁরা সকলেই পাবেন। এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, কারা কারা ওই কর্মসূচি মনোযোগ দিয়ে করছেন না, তা তিনি জানেন। তাঁর কাছে সব রকম রিপোর্ট আসছে। তাঁরা সেই নেতাদের চিহ্নিত করছেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিষেকের সতর্কবাণী তো বটেই, শুক্রবারের বৈঠকে দলনেত্রী মমতার কাছেও ধমক খেয়েছেন অনেক নেতা। এমনকি, মমতা ধমক দেন তাঁর ‘আস্থাভাজন’ নেতা তথা পুরমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমকেও। মমতা তাঁকে বলেন, ববি বেশি কথা বলছেন। তিনি যেন শুধু পুরসভা নিয়েই কথা বলেন। তার বাইরে কোনও বিষয় নিয়ে যেন কথা না বলেন। একান্তই যদি বলতে হয়, তা হলে বলার আগে যেন মমতার অনুমতি নেন। এই ‘নির্দেশ’ ববি যেন মনে রাখেন।
দলের নেতাদের বেশি করে দলীয় টুইট রিটুইট করতে হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন ঘোষ, পরেশ পাল এবং মালা রায় বেশি রিটুইট না করায় অনুযোগ প্রকাশ করেছেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। নদিয়ায় সংগঠন দুর্বল হচ্ছে জানিয়ে জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করেছেন মমতা। সমালোচনা করেন দলের যুব সভাপতি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষেরও। মমতার অভিযোগ, সংগঠন শক্তিশালী করতে ব্যর্থ সায়নী। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের একাংশ ওই খবর জানিয়ে বলেন, এর পরে সায়নী দলনেত্রীর কাছে সর্বসমক্ষেই ক্ষমা চেয়ে নেন। সঙ্গে জানান, তিনি আগামী দিনে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। ছাত্র এবং যুবশাখার উপরে বাড়তি নজর দিতে সায়নীর পাশাপাশি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণঙ্কুর ভট্টাচার্যকেও দায়িত্ব দেন মমতা। তৃণমূলের সব শিক্ষক সংগঠন দেখার দায়িত্ব মমতা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর।