অভিষেক জানালেন আবার বাঁকুড়া থেকেই এই জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন। তারিখ দিলেন ২২ মে। —নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম প্রমাণ মিললে তিনি ফাঁসির মঞ্চে জীবন উৎসর্গ করবেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের চিঠির প্রেক্ষিতে তাঁকে পাঠানো সিবিআইয়ের নোটিস প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তাঁর ঘোষণা, আবার ২২ মে থেকে বাঁকুড়া জেলা থেকেই জনসংযোগ যাত্রা পুনরায় শুরু করবেন।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা নির্দেশ দেন কুন্তল ঘোষের চিঠি মামলায় ইডি এবং সিবিআই প্রয়োজনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তার আগে অবশ্য এ নিয়ে এই পর্যবেক্ষণ ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করলেও শুক্রবার অভিষেকের আবেদন জরুরি ভিত্তিতে শুনতে রাজি হয়নি বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পরই সিবিআইয়ের নোটিস পান অভিষেক। শনিবার সকাল ১১টায় তাঁকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে তলব করা হয়েছে। তাই শুক্রবার বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি অসমাপ্ত রেখেই তৃণমূল নেতা কলকাতা ফিরছেন। তার আগে রোড শো থেকে হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানান তৃণমূল নেতা।
অভিষেকের কথায়, ‘‘যারা আমাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সম্মান করি। যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলে, আমি সেই বিচারপতিকেই বলব ফাঁসির আদেশ দিতে।’’ তিনি অভিযোগ করেন ‘তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রা’কে থমকে দিতেই এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। এ জন্য অভিষেক নিশানা করেছেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘‘সারদা, নারদা, কয়লা, গরু— কোনও মামলাতেই আমার বিরুদ্ধে কিচ্ছু পায়নি। ওরা আমার স্ত্রী, আইনজীবী এমনকি আপ্ত সহায়ককেও ছাড়েনি। কিন্তু কিচ্ছু পায়নি। কিন্তু আমার গলা কেটে ফেললেও ‘জয় বাংলা’ই বেরোবে।’’
অভিষেক এ-ও বলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মিলবে না। পাওয়া গেলে তিনি নিজে ফাঁসির মঞ্চে যাবেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সংযোজন, ‘‘প্রকৃতি সর্বশক্তিমান। কিন্তু এখানে প্রমাণ হয়েছে মানুষই সর্বশক্তিমান। বৃষ্টিও আঁচড় কাটতে পারেনি। বর্ষার সময় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গিয়েছে। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমের মধ্যেও মানুষ ভিড় করেছেন। তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রাকে থমকে দিতে চায় ওরা।’’ সিবিআইয়ের তলব প্রসঙ্গে অভিষেক আরও বলেন, ‘‘ওদের কাছে আমি মাথা নিচু করিনি। আমি মাথা নিচু করব মানুষের কাছে, বাবা-মায়ের কাছে, দলনেত্রীর কাছে। কিন্তু দিল্লির বহিরাগতদের কাছে মাথা নত করব না। এসএসসিতে যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায় আমি ফাঁসির মঞ্চে জীবন দেব।’’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অভিষেক শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। জানান, তাঁকে সিবিআই তলবের প্রেক্ষিতে কাউকে প্রতিবাদ করে রাস্তায় নামতে হবে না। অভিষেকের কথায়, ‘‘আমি আমার লড়াই লড়ে নেব। আমার জন্য কাউকে রাস্তায় নামতে হবে না। আপনি আপনার অধিকারের লড়াই করুন। নিজের জন্য রাস্তায় নামুন। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে প্রতিবাদ করুন। নিজের পরিষেবার জন্যও লড়াই করুন।’’ শেষে বিজেপিকে নিশানা করে অভিষেকের সংযোজন, ‘‘আগামী এক বছর পর বিজেপি থাকবে না। ইডি, সিবিআই থাকবে। আর মানুষ থাকবে। কিন্তু সিবিআই, ইডির উপর ভর করে যারা দল করছে, তারা মেঘনাদের মতো মেঘের আড়াল থেকে লড়াই করছে। আমি শুধু মানুষের কাছে আশীর্বাদ চাইছি।’’