—প্রতীকি ছবি।
লোকসভা ভোটের এখনও কয়েক মাস বাকি। সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বাংলার শাসকদলও সেই পর্যায়ে নিজেদের রণনীতি তৈরির কাজ শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিষ্ণুপ্রসাদ রায় এই আসনে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু বিধায়কের মৃত্যুর পর মাত্র আড়াই বছরেই সেই আসন ছিনিয়ে এনেছে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে এই ধূপগুড়ি মডেলকেই তৃণমূল সামনে রাখতে চায় বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত।
ধূপগুড়িতে বিজেপির হাতে থাকা আসন যেমন ছিনিয়ে এনেছে তারা, সঙ্গে জোট ইন্ডিয়ার পক্ষেও বাংলার মানুষ তাদেরই বিকল্প শক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে মনে করছে তারা। এই উপনির্বাচন সে দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ধূপগুড়ির ভোটে কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র রায়। এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপিকে সরাসরি পরাস্ত করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। এই লড়াইয়ে মাত্র ১৩ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিলেন সিপিএম-কংগ্রেসের জোটপ্রার্থী। সেই সময় জোট ইন্ডিয়ার শরিক হয়েও, বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বাংলার শাসকদল। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ফল নিয়েই লোকসভা ভোটের ঘুঁটি সাজাতে চায় তারা।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘ধূপগুড়ির ফলাফল নিশ্চিত আমাদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিজেপির আসন জিতে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছিলাম যে বিজেপিকে আমরাই হারাতে পারি। সঙ্গে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোটের ভোট নিজেদের দিকে টেনেও আমরা বুঝিয়েছি যে বাংলায় জোট ইন্ডিয়ার হয়ে বিজেপিকে কে হারাতে পারি আমরাই।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের মাস খানেক আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে সেই ভোট ৬ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। বিজেপি বিরোধী ভোট তাদের দিকেই এসেছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। তাই তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি মনে করছেন, বিরোধী ভোটাররা বুঝে গিয়েছেন, বিজেপিকে হারাতে কাকে ভোট দেওয়া উচিত।
জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশের আলোচনা, লোকসভা ভোটের প্রাক মহূর্তে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হতে পারে তৃণমূলের। সেই ভাবেই দুই শিবিরের মধ্যে আলোচনা চলছে বলেই সূত্রের খবর। কারণ কয়েক মাস আগেই দিল্লিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাক্ষাৎ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। তারপরেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অপর দিকে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা বামফ্রন্টের সঙ্গেও জোটে আগ্রহী। এই দুই পরিস্থিতিতেই লোকসভা ভোটে আসন রফার যাবতীয় সমীকরণ নিজেদের দিকেই রাখাতে চান তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই সব আলোচনার ক্ষেত্রেই ধূপগুড়ি মডেলকেই সামনে রাখা হতে পারে বলেই তৃণমূলের অন্দরমহল সূত্রে খবর।