মঞ্চে: পুরুলিয়ার শিমুলিয়া মাঠে তৃণমূলের সভায়। ছবি: সুজিত মাহাতো
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভার জবাব দিতে কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতাকে মাঠে নামালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার পুরুলিয়ায় শিমুলিয়ার মাঠে ভরা সভামঞ্চ থেকে তাঁরা এক যোগে অমিতের তোলা অভিযোগের শুধু জবাবই দিলেন না বরং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যকে বঞ্চনার একগুচ্ছ অভিযোগ তুললেন।
শুরুতেই জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো সভার উদ্দেশ্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপির তাবড় নেতারা পুরুলিয়ায় এসে কুৎসা ও অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। জেলায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। তারই যোগ্য জবাব দিতে এই সভা।’’
অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন, পুরুলিয়ায় এখনও পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে মহিলাদের জল আনতে যেতে হয়। শুভেন্দু দাবি করেন, বিজেপি পাঁচ তারা নেতাদের এনে চূড়ান্ত মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। পুরুলিয়ার মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতায় জানেন, বাড়ির সামনে ট্যাপ খুলতেই এখন জল মেলে। করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইটে আছে, জল সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই রাজ্যে ২০০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। সেখানে বিজেপি শাসিত গুজরাত ও ছত্তীসগঢ়ে যথাক্রমে শূন্য ও তিন শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।’’
বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে সরব হয়েছিলেন অমিত। মহুয়ার যুক্তি, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে ২২০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যের। সীমান্ত রক্ষার দায় কেন্দ্রের বিএসএফ-এর। অনুপ্রবেশ যদি হয়েই থাকে, দায়টা তাহলে কার?’’
কেন্দ্র সরকার রাজ্যকে উন্নয়নের যে টাকা দিচ্ছে, তা গ্রামে পৌঁচচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন অমিত। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে শুভেন্দু, ফিরহাদের সঙ্গে মন্ত্রী শশী পাঁজাও দাবি করেন, কেন্দ্রে বিজেপি আসার পর থেকেই জনকল্যাণমূলক সমস্ত প্রকল্পেই ধারাবাহিক ভাবে অর্থ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। উদাহরণ তুলে শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে বরাদ্দ কমে হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা।’’ তৃণমূলের মন্ত্রীদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিলের বরাদ্দ কমাচ্ছে, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা বন্ধ করেছে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতন বন্ধ করেছে।
শুভেন্দু ও ফিরহাদের বক্তব্য, ‘‘একের পর এক সামাজিক ও গ্রামীণ উন্নয়নের প্রকল্পগুলিকে ধ্বংস করছে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার। পুরসভার মাধ্যমে শহরের উন্নয়নের যে কাজ করা হয়, সেই প্রকল্প জওহরলাল নেহেরু রুরাল আরবান মিশনেও কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ আসে না। ফিরহাদ দাবি করেন, ‘‘পুরশহরগুলির উন্নয়ন এখন রাজ্য সরকারের অর্থকোষ থেকেই খরচ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বেশির ভাগ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে।’’
অমিত দাবি করেছিলেন, কেন্দ্র ২ টাকা কিলো চাল দিলেও পুরুলিয়ায় তা দেওয়া হয় না। শুভেন্দুর পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্যের প্রচুর মানুষ ২ টাকা কেজি চাল পাচ্ছে, যা একান্ত ভাবে রাজ্য সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে নেওয়া। কেন্দ্র সরকারের খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর অনেক আগে থেকেই রাজ্য সরকার ২ টাকা কেজি চাল দিচ্ছেন। ২০১১তে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই জঙ্গলমহলে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই জননেত্রী জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকাগুলিতে ২ টাকা কেজি চাল বিলি শুরু হয়।’’ তিনি জানান, কেন্দ্রে টাকা না দিলেও ২ টাকার চাল বিলি করতে রাজ্যের প্রতি বছর সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
জঙ্গলমহলের অশান্তি দূর করে তৃণমূলই শান্তি ফিরিয়েছে দাবি করে বক্তারা প্রশ্ন ছোড়েন, বিজেপি তখন কোথায় ছিল?
ফেরার আগে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘দু’দিনের নোটিসে এত মানুষ জড়ো করে একটা ছোট্ট শক্তি দেখালাম। বাকি শক্তি তোলা থাকল, মুখ্যমন্ত্রী যে দিন পুরুলিয়ায় সভা করতে আসবেন, তার জন্য।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মিথ্যা কথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। মানুষ আর ওদের কথায় ভুলবে না।’’