গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নিটের প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে একযোগে সরকারকে চেপে ধরতে তৈরি বিরোধীরা। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে অষ্টদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন। সেই অধিবেশনের প্রথম থেকেই যাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে চাপে ফেলা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করেছে বিরোধীরা। তার আগে রবিবার তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লির বাড়িতে যান সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তৃণমূল সংসদীয় সূত্রে খবর, মন্ত্রী সুদীপের কাছে সংসদ চালাতে তৃণমূলের সহযোগিতা চেয়েছেন। গঙ্গা-তিস্তা জলচুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন, তা নিয়েও আলোচনা হয় সুদীপ-কিরেনের। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বক্তব্য রয়েছে, তাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংসদে এই প্রথমবার শক্তিশালী বিরোধীদের মুখোমুখি হবেন মোদী। কারণ গত ১০ বছর কোনও মর্যাদাপ্রাপ্ত বিরোধী দল ছিল না সংসদে। এ বার ৯৯ জন সাংসদ নিয়ে মোদী সরকারের উপর আক্রমণ শানাতে তৈরি রাহুল গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের মতে, সেই পরিস্থিতি আঁচ করেই সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের কাছে গিয়েছিলেন সংসদীয়মন্ত্রী।
যদিও, প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে সংসদে শপথ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও নতুন সাংসদেরা। আর অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে ঝড় তুলতে চাইছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। রবিবার দিল্লিতে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বৈঠক করেন সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দলের দলনেতার সঙ্গে। যদিও, তার আগেই প্রোটেম স্পিকারের প্যানেলে থাকলেও, তা প্রত্যাখান করার কথা জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
রিজজুর সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের আগেই সুদীপ বলেছিলেন, ‘‘লোকসভা ঠিকমতো পরিচালিত হোক, লোকসভায় ঠিক ভাবে বিতর্ক হোক। লোকসভায় যাতে বিরোধীদের মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে, সেই সুযোগ যেন সরকারপক্ষ করে দেয়। এ বারে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নেট এবং নিটের পরীক্ষায় দুর্নীতির পরিমাণ অনেক অনেক বিশাল। আগে ব্যাপম কেলেঙ্কারি হয়েছে। এখন যখন আমাদের ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা সংসদ শুরু হওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন, তখন এই বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় সামনের সারিতে রাখব। আমরা উদ্যোগী হব যাতে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে। সরকারের তরফে যেন খুব স্পষ্ট ভাবে জবাব দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইব। নিট পরীক্ষাকে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যে ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, কেলেঙ্কারির কথা সামনে এসেছে, তা দেশকে জানাতেই হবে।’’
আজকে দিল্লীতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে রিজিজু। ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভার অধিবেশন শুরুর আগে সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তত্ত্বাবধানে প্রোটেম স্পিকার হিসাবে শপথ নেবেন ওড়িশার কটকের সাত বারের সাংসদ ভর্তৃহরি। তার পর তিনি সংসদে পৌঁছে সাংসদদের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান শুরু করবেন। এই কাজে প্রোটেম স্পিকারকে সাহায্য করার জন্য বিরোধী দলের নেতাদের নিযুক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি। প্রোটেম স্পিকারের প্যানেলে রাখা হয়েছে কংগ্রেসের কে সুরেশ, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিএমকে-র টি আর বালুকে। কিন্তু বিরোধীরা এই দায়িত্ব গ্রহণ না করার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে প্রোটেম স্পিকারের প্যানেলে শুধুমাত্র বিজেপির রাধামোহন সিংহ ও ফাগ্গন সিংহ কুলস্তে থাকবেন। সাংসদদের শপথ নেওয়া হয়ে গেলে আগামী ২৬ জুন লোকসভার স্পিকার নির্বাচন হবে। তার পর ২৭ জুন লোকসভা এবং রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি। আগামী ২ বা ৩ জুলাই সংসদের বিতর্কে অংশ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। আর মঙ্গলবার শপথ নেবেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদেরা।
প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্ব সাধারণত লোকসভার সবচেয়ে বরিষ্ঠ এবং অভিজ্ঞ সাংসদকে দেওয়া হয়। সে দিক থেকে মনে করা হয়েছিল, এ বার এই দায়িত্ব পাবেন কংগ্রেসের আট বারের সাংসদ কে সুরেশ। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে সাত বারের সাংসদ ভর্তৃহরিকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় শুরু হয় বিতর্ক। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, দলিত বলে সুরেশকে প্রোটেম স্পিকার করা হয়নি। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এ নিয়ে যুক্তি দেন, সুরেশ টানা আট বারের সাংসদ নন। মাঝে দু’বছর তিনি ভোটে হেরেছিলেন। কিন্তু ভর্তৃহরি টানা সাত বছর ধরে সাংসদ পদে রয়েছেন। প্রোটেম স্পিকারের ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিরোধী শিবির লোকসভার অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই সংঘাতের পথে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে সুদীপ বলেন, ‘‘প্রোটেম স্পিকারের চেয়ারে আমার বসা হবে না। কারণ আমার কাছে দলের নির্দেশই শিরোধার্য। দলনেত্রীর নির্দেশ মাথায় পেতে নিয়েছি, এই মূহূর্তে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, ইন্ডিয়া জোট কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হোক আমরা চাই না। বিরোধীদের মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধ চেহারা তৈরি হয়েছে, তা আমরা কোনও ভাবেই নষ্ট হতে দেব না। তাই আমরা সেখানে যাচ্ছি না।’’