দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক অভিষেকের। —সংগৃহীত।
দিল্লিতে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, ‘‘মঙ্গলবার যন্তরমন্তরে তৃণমূলের কর্মসূচিতে যদি একজন সাধারণ মানুষের গায়েও আঁচড় পড়ে, তা হলে তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর! যেখানে নরেন্দ্র মোদী থাকেন, যেখানে অমিত শাহ, জেপি নড্ডা থাকেন, সেখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি। বিজেপি যে ভাষা বোঝে, আমি সেই ভাষাতেই জবাব দিতে জানি!’’
১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনায় বাংলার প্রাপ্য আদায়ে দিল্লিতে দু’দিন ধরে কর্মসূচি নিয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। সোমবার গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে ধর্না কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের। তার পরে অভিষেক যখন সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন, তখনই পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বাধে তৃণমূল নেতৃত্বের। সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীনই হুইস্ল বাজাতে শুরু করে পুলিশ। তার পরে বচসা শুরু হয় অভিষেকের সঙ্গে। মুহূর্তে শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। সেই সময়ে মোবাইল ফোন খুইয়েছেন সাংসদ শান্তনু সেন। জুতো হারিয়েছে মন্ত্রী সুজিত বসুর। সাংবাদিক সম্মেলন অসম্পূর্ণ রেখেই গাড়িতে উঠে পড়েন অভিষেক। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে অভিযোগ করেন, অভিষেকের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল দিল্লি পুলিশ।
সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিষেক বলেন, ‘‘রাজঘাট শান্তির পীঠস্থান। সেখানে মহিলাদের উপরও হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার আমাদের মারুক ক্ষতি নেই। কিন্তু একজনও সাধারণ মানুষের গায়ে হাত পড়লে তার ফল ভাল হবে না।’’ সোমবারই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বিহারের বেগুসরাই থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ অভিষেক পাল্টা বলেন, ‘‘গত দু’বছরে বাংলায় ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্ত হয়েছে। কী হয়েছে? সারদা, নারদ তদন্তের কী সুরাহা সিবিআই করতে পেরেছে? আর যদি সিবিআই তদন্ত হয়ে বাংলার মানুষ তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান, তা হলে তাকে আমি স্বাগত জানাব।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘দু’বছরে ৬৯টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় পৌঁছে তদন্ত করেছে। কী পেয়েছে? বিজেপি ক’টা এফআইআর করেছে?’’
সোমবার রাতে নিজের হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে অভিষেক লেখেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ ধর্নাকে ব্যাহত করার পর, রাজঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে নর্থ অ্যাভিনিউতে সাংবাদিক বৈঠক করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। দিনভর পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের দমন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা আমাদের অনুষ্ঠানস্থল থেকে বার করে দেওয়ার হাজারও চেষ্টা করেছেন। সাংসদ ও বিধায়কদের মারধর করেছেন, নিরপরাধ মানুষকে ধাক্কা দিয়েছেন। এমনকি, লাঠিপেটা করা থেকেও বিরত থাকেননি। মনরেগা এবং আবাস যোজনার তহবিল নিয়ে দাবি করার জন্য আমাদের ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’কে নির্মম ভাবে দমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ভয়ে কাঁপছে।”
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় যন্তরমন্তরে সভা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু অভিষেক জানিয়েছেন, তা শুরু হবে দুপুর ১টায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সভা চলবে। তার পর তৃণমূলের প্রতিনিধিদল যাবে কৃষিভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। অভিষেক জানিয়েছেন, প্রতিমন্ত্রী যদি সদুত্তর দিতে পারেন ভাল। যদি না পারেন, তা হলে সেখান থেকে বেরিয়েই পরের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র স্পষ্ট বার্তা, বাংলার মানুষের ‘হক’আদায়ে কোনও ছাড় দেবেন না তাঁরা!