ফাইল চিত্র।
ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে জাতীয় স্তরে শুরু আলোড়নের মধ্যে সেই বিতর্ক এসে গেল রাজ্য রাজনীতিতেও। ‘ফোন ট্যাপিং’ সম্পর্কিত এই বিতর্কে জড়াল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম। শুধু রাজনৈতিক স্তরে বিতর্কই নয়, এ ব্যাপারে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে’ তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ।
পূর্ব মেদিনীপুরে একটি দলীয় সভায় সোমবারই পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানেই জেলার পুলিশ সুপারের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘ভাইপোর অফিস থেকে যাঁরা ফোন করে আপনাকে, তার প্রত্যেকটা ফোন নম্বর, কল রেকর্ড আমার কাছে আছে। আপনাদের হাতে যদি রাজ্যের সরকার থাকে, আমাদের হাতেও কেন্দ্রের সরকার আছে!’’ এই প্রসঙ্গেই জেলা পুলিশ সুপারকে কাশ্মীরে বদলি করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
শুভেন্দু নাম না করলেও তাঁর বক্তব্য সামনে আসার পরই তাঁর বিরুদ্ধে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফোন ট্যাপিং’-এর অভিযোগে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ বলেন, ‘‘এলওপি প্রকাশ্যে পুলিশকে বলেছে, ওর কাছে আমাদের নেতার দফতরের ফোনের কল লিস্ট, রেকর্ডিং সব আছে। এটা ফোনে আড়ি পাতার প্রমাণ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের কাছে অনুরোধ, অবিলম্বে তদন্ত শুরু করে ওকে জেরার মাধ্যমে গোটা চক্রান্ত প্রকাশ্যে আনা হোক।’’ ফোনে আড়িপাতার অভিযোগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল। তার মধ্যে রাজ্যে শুভেন্দুর বক্তব্যকে ‘প্রমাণ’ হিসেবে দাবি করে আক্রমণে নেমেছে তৃণমূলও।
বিরোধী দলনেতা অবশ্য এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘দলদাস পুলিশ কিছুই করতে পারবে না। পুলিশের কাজ মামলা করা, ওরা করেছে। আমরা ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছি। মামলা করে আমাদের কিছু করা যাবে না!’’
এই চাপানউতোরের পাশাপাশি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের ১৫ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে জেলা পুলিশ। তমলুক থানার আইসি সোমবার রাতেই এই মামলা দায়ের করেছেন। জানা গিয়েছে, প্রকাশ্য জমায়েতে পুলিশকে হুমকি, করোনা অতিমারির মধ্যে নিয়ম ভেঙে জমায়েত (বিপর্যয় মোকাবিলা আইন)-এর ধারার পাশাপাশি গোপন তথ্য রাখার ধারাও যুক্ত করা হয়েছে ওই মামলায়। জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে মানছেন, ‘‘ডিজাস্টার ম্যানেজেমেন্ট অ্যাক্ট, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ধারায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টিও থাকছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।’’
অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছেন বিজেপির (তমলুক) জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকও। নবারুণ পাল্টা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মীদের খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না। আর আমরা প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা দায়ের করা হচ্ছে।’’ এই বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা আইনি ভাবেই এর মোকাবিলা করব।’’