ফাইল চিত্র।
বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। অভিযোগ, নির্বাচনে লড়ার আগে প্রার্থীকে যে হলফনামা জমা দিতে হয়, সেখানে নারদ মামলার তথ্য তিনি গোপন করে গিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি অনুযায়ী, প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগে মামলা চললে সেটা হলফনামায় জানাতে হয়। কিন্তু, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুকুলের জমা দেওয়া হলফনামায় নারদের উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, এ নিয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কিছু করবে না। কমিশনে অভিযোগ জমা পড়লে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর সূত্রের বক্তব্য, মুকুলবাবু যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তা যাচাই করে গ্রহণ করেছেন রিটার্নিং অফিসার। তার ভিত্তিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন তাদের আইন মত পদক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু সে ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরের কোনও ভূমিকা নেই।
আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে বলেছে, প্রার্থীকে যাবতীয় তথ্য হলফনামা দিয়ে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হবে। কারণ, সেটা দেখে মানুষ ঠিক করবেন, তাঁরা সেই প্রার্থীকে ভোট দেবেন কি না। সেখানে কোনও প্রার্থীর নামে যদি এফআইআর থাকে, আর সেই তথ্য যদি তিনি হলফনামায় না দেন, তা হলে তথ্য গোপন করা হবে। সেটা আইনের চোখে অপরাধ। কেউ এ নিয়ে অভিযোগ করলে এ নিয়ে মামলা হবে। বার বার এ ধরনের অভিযোগ ওঠে। মামলাও হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নজরের আড়ালে চলে যায়।
আর এক আইনজীবী দীপঙ্কর কুণ্ডুর বক্তব্য, এমন অভিযোগ সত্যি প্রমাণ হলে প্রার্থীপদই খারিজ হতে পারে। এই অভিযোগ সরাসরি কমিশনের কাছেও করা যেতে পারে অথবা আদালতে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে মামলা করে তাতে অন্যতম বিবাদী পক্ষ হিসেবে কমিশনকে যুক্ত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দোষ প্রমাণে নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতেও মামলা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এ ব্যাপারে অভিযোগ করতে পারেন।
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অভীক ঘটকের মতে, এ ব্যাপারে সরাসরি হাই কোর্টে মামলা (ইলেকশন পিটিশন) করা যেতে পারে। ভোটের ফল ঘোষণা থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটে লড়া কোনও প্রার্থী বা ভোটার এই মামলা করতে পারেন।
কুণালের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী নারদ মামলার নামোল্লেখ না করে কত নম্বর ধারায় মামলা চলছে, সেটা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, মুকুল তা-ও করেননি। কুণালের অভিযোগ, মামলায় অব্যাহতি পেতেই বিজেপিতে গিয়েছেন মুকুলরা। বিজেপি নিশ্চয়ই মুকুলকে আশ্বাস দিয়েছে। তাঁকে যে তদন্তের বাইরে রাখা হচ্ছে এটা নিশ্চয়ই আগে থেকে তিনি জেনে গিয়েছিলেন। ববি হাকিম তাঁর হলফনামায় নারদের কথা উল্লেখ করেছেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্রও উল্লেখ করেছেন। কুণালের কথায়, “আইনত কী করা যায় তা দল খতিয়ে দেখছে।’’
এ দিন এ বিষয়ে মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।