দলের নেতাদের একাংশকে কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র
বাঁকুড়ার সভা থেকে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’দের কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, তিনিই ‘গোটা বাংলার পর্যবেক্ষক’। কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, সে সবের উপর তিনি নজর রাখছেন। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরে জেলা পর্যবেক্ষকদের পদ তুলে দেওয়া নিয়ে দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। যাদের পুরোভাগে রয়েছেন দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর সঙ্গে দলের বর্তমান টানাপড়েনের আবহে মমতার বুধবারের বার্তা আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে দলের একাংশ।
তৃণমূলে শেষবার সাংগঠনিক রদবদলে দলের জেলা পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দিয়েছে তৃণমূল। তা নিয়ে দলের নানা স্তরে অনুযোগ থাকলেও নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু তা দলীয় আলোচনায় প্রকাশ্যে এনেছেন। দুই মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ ৬ জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। রদবদলের পর তিনি-সহ অন্য পর্যবেক্ষকরাও আর ওই পদে নেই। তাঁর ক্ষোভের নিরসন করতে দু’দফায় আলোচনায় বসেছেন দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। সেই আলোচনায় কোনও মীমাংসা এখনও পর্যন্ত হয়নি। আবার আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌগত। তৃণমূল সূত্রের খবর, আলোচনায় সৌগতকে শুভেন্দু পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন। পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছিলেন, কাজ করার ‘স্বাধীনতা’ চান।
এত দিন এ নিয়ে দলনেত্রী প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কিন্তু বুধবার বাঁকুড়ায় কারও নাম না করে মমতা বলেছেন, ‘‘অনেকেই বলছেন এই জেলায় পর্যবেক্ষক কে, ওই জেলায় পর্যবেক্ষক কে। আমি বলছি, সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক!’’ অর্থাৎ, দলের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়ার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত দিন সরকারের কাজে বেশি মন দিয়ে দলকে একটু ঢিলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার পুরো দলটাই আমি দেখব। এই বাঁকুড়ার মাটি থেকেই সেই কাজ শুরু করলাম।’’
আরও পড়ুন: জেলে থাকলেও বাংলায় তৃণমূলকে জেতাব, বাঁকুড়া থেকে চ্যালেঞ্জ মমতার
গোটা দল এখন থেকে তিনিই দেখবেন, এই প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমেও মমতা শুভেন্দু-সহ দলের বিক্ষুব্ধ অংশকে বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে তৃণমূলের নেতাদের অনেকের অনুমান। শুভেন্দু একাধিকবার তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, নেত্রীর নির্দেশ মেনে নিতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি অন্য কারও নেতৃত্ব মানবেন না। ‘অন্য কারও’ বলতে শুভেন্দু দলের তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বুঝিয়েছেন বলে তাঁর শিবিরের বক্তব্য। বুধবারের বক্তৃতায় মমতা সেই বিষয়েও বার্তা দিয়েছেন বলে দলের শীর্ষনেতারা মনে করছেন। কারও নাম না করলেও এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘দলের সর্বময় নেত্রী প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বার থেকে তিনিই পুরো দল দেখবেন। ফলে কারও আর কোনও ক্ষোভ বা অনুযোগ থাকার কথা নয়।’’
তবে পাশাপাশিই মমতার বক্তব্যে এটাও স্পষ্ট যে, তৃণমূলে ‘পর্যবেক্ষক যুগ’ আপাতত আর ফিরছে না। মমতার ‘সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক’ বক্তব্যে সেই সম্ভাবনার দরজায় তালা পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিহারে স্পিকার পদ দখলে নিয়ে ‘চক্রব্যূহ’ দৃঢ় করল বিজেপি
তৃণমূল নেতাদের একাংশ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নাম না করে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘দু’-একজনকে দেখবেন তৃণমূলও করছে। আবার অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছে। আমি মনে করি এরা ধান্দাবাজ।’’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘কে কোথায় যাচ্ছে, কোথায় কী হচ্ছে, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সব দেখছি, নজর রাখছি। দিদি সব জানে। দিদি সব জেনেও ছেড়ে রেখেছে।’’ নিজে নজর রাখার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে কে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, আপনারাও তার খবর রাখুন।’’