২০১৪ সালে সারদা মামলায় তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময়ও মমতা তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাননি। কলকাতা হাই কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, কোনও মামলায় গ্রেফতার হলে সরকারি কর্মীকে সাসপেন্ড করার কথা আইনে থাকলেও মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে অপসারণ সংক্রান্ত কোনও বাধ্যবাধকতার কথা নেই।
শরদ পওয়ার এবং মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রে এনসিপি মন্ত্রীর গ্রেফতারির পরেই শরদ পওয়ারের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেআইনি আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে নবাবকে বুধবার বিকেলে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পরে ফোনে প্রায় ১০ মিনিট মমতার সঙ্গে এনসিপি সভাপতি পওয়ারের কথা হয়। ধৃত মন্ত্রীর প্রতি মমতা সহমর্মিতা জানান বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
এনসিপি সূত্রের খবর, ধৃত নবাব মালিককে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ না দেওয়ার জন্য পওয়ারকে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। এ প্রসঙ্গে গত বছরের ১৭ মে রাজ্যের তৎকালীন দুই মন্ত্রী, ফিরহাদ হাকিম এবং প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির কথাও শরদকে বলেছেন মমতা। নারদ মামলায় সিবিআই ফিরহাদ-সুব্রতকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁদের মন্ত্রিসভা থেকে সরাননি। প্রসঙ্গত, ওই মামলায় সে দিন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
তার আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সারদা মামলায় তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময়ও মমতা তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাননি। কলকাতা হাই কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, কোনও মামলায় গ্রেফতার হলে সরকারি কর্মীকে সাসপেন্ড করার কথা আইনে থাকলেও মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে অপসারণ সংক্রান্ত কোনও বাধ্যবাধকতার কথা আইনে নেই। তবে গ্রেফতারির কিছু দিন পরে মদন নিজেই ইস্তফা দিয়েছিলেন।
অতীতে অর্থলগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির মামলায় সাংসদ তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হলেও দলগত ভাবে তৃণমূল তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছে। দলের তরফে সিবিআই, ইডি-সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং ‘প্রতিহিংসামূলক’ আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বুধবার নবাবের গ্রেফতারির পর ইডি-র দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান এনসিপি কর্মীরা। ঠিক যেমন ভাবে গত মে মাসে ফিরহাদ-সুব্রতদের গ্রেফতারির পর সিবিআই দফতরের সামনে বিক্ষোভের আঁচ দেখা গিয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ মুম্বইয়ে ইডি-র আঞ্চলিক দফতরে প্রায় ৭ ঘণ্টা জেরার পর গ্রেফতার করা হয় নবাবকে। ইডি-সূত্রের খবর, বেআইনি আর্থিক লেনদেনের ওই মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ভাই ইকবাল কাসকর এবং বোন হাসিনা পারকরের নাম। যদিও গ্রেফতারির পর শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ইডি দফতরের বাইরে হাজির সাংবাদিকদের উদ্দেশে নবাব চিৎকার করে বলেন, ‘‘মাথা নত করব না। ভয় পাই না। লড়াই করব এবং জিতব। সত্যটা সকলের সামনে আনব।’’
সম্প্রতি মুম্বইয়ে হাসিনার ঠিকানা-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, ইকবালকেও। দাউদ পরিবারের সঙ্গে সম্পত্তি কেনাবেচায় নবাব জড়িত ছিলেন বলে ইডি-র একটি সূত্রের দাবি। গত অক্টোবরে শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ানকে মুম্বই উপকূলে প্রমোদতরী থেকে মাদক মামলায় গ্রেফতারির পর ধারাবাহিক ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন নবাব। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিজেপি চক্রান্ত করে আরিয়ানকে ফাঁসিয়েছে।