তাণ্ডব: মোটরবাইক আর হাতবোমা ফেলে রেখেই চম্পট। রবিবার পূজালিতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
পূজালির নির্বাচন কার্যত হয়ে দাঁড়াল কেন্দ্র বনাম রাজ্যের লড়াই।
তৃণমূল বনাম বিজেপি-র সমানে সমানে টক্করে সিপিএম-কংগ্রেসকে আতসকাঁচ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, শাসক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের ভোট লুঠের পর ইভিএম ভেঙে ‘বাড়া ভাতে ছাই’ দিল বিজেপি।
মুখে কাপড় বাঁধা। হাতে ওয়ান শটার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বোমার থলি নিয়ে প্রায় জনা পঞ্চাশের এক মোটর বাইক বাহিনী পুজালির বিভিন্ন বুথে বোমা ও গুলি ছুড়ে তাণ্ডব চালাল। কিন্তু ভোটের যন্ত্রে ওই তাণ্ডব কতটা কাজ করেছে, তা জানা যাবে আগামী বুধবারের ভোট গণনায়।
রবিবার পুজালির ১৬টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ জায়গাতেই হানা দিয়েছিল সশস্ত্র বাইক বাহিনী। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ পুজালির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আচমকা এই বাহিনী হাজির হয়ে বোমা ও গুলি চালিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোটার ও বিরোধী দলের এজেন্টদের হটিয়ে দিয়ে বুথের দখল নেয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ইভিএমের বোতাম টিপে তারা একের পর এক ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেক পর বুথ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে আকাশে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের উদ্দেশে বলে যায়, ‘‘যা ভিতরে যা। সব ভোট দিয়ে গেলাম!’’ বাইক বাহিনী বেরিয়ে যাওয়ার পরে তখন থরথর করে কাঁপছেন প্রিসাইডিং অফিসার। পোলিং অফিসার বুথ ছেড়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে আরও এক দফা নাটক বাকি ছিল।
আরও পড়ুন...
সন্ত্রাস-হুমকি-তাণ্ডবের পুরভোটে প্রতিবাদও
বাইক বাহিনী বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আরেক দল মুখ ঢাকা যুবকের দল এলাকায় হাজির। মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। বুথে ঢুকে ইভিএম মেশিন টেবিল থেকে তুলে নিয়ে মাটিতে আছাড় মেরে ভেঙে দিল! ঘরের সব নথি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে বাতাসে উড়িয়ে দিল। এ বারে প্রিসাইডিং অফিসার বাথরুমে ঢুকে ছিটকিনি এঁটে দিয়েছেন! ওই যুবকের দল বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভোটারদের দিকে তাকিয়ে বলে গেল, ‘‘ওরা ভরে ভরে দেবে। আমরা ভেঙে দেব! যেখানে ভরবি সেখানে ভাঙব!’’ শুধু ওই ওয়ার্ড নয়। ৯ নম্বরে পর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি ইভিএমও একই কায়দায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে খবর।
এ দিন দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও দুপুরের পরে তৎপর হয় পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘নবান্নের শীর্ষ পর্যায় থেকে পুলিশকে রাজনীতির রঙ বিচার না করে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরে পুলিশ তার ধর্ম পালন করেছে।’’ দুপুরের পর থেকে দুষ্কৃতী বাহিনী পিছু হটতে থাকে। বিরোধীদের অভিযোগ পাওয়ার পরে ডায়মন্ড হারবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধনের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী দুষ্কৃতীদের হটিয়ে দেয়।
মহকুমা শাসক (সদর) প্রলয় মজুমদার বলেন, ‘‘তিনটি বুথে ইভিএম ভাঙা হয়েছে। আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সভাপতি (পশ্চিম মণ্ডল) অভিজিৎ দাস অবশ্য ইভিএম ভাঙার দায় নেননি। তিনি বলেন, ‘‘ইভিএম ভাঙার কোনও পরিকল্পনা বিজেপির ছিল না। সাধারণ মানুষ শাসক দলের তাণ্ডব প্রতিরোধ করেছে। তাঁরাই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়েছেন।’’ ইভিএম ভাঙার বিষয়ে পুজালি পুর নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কানে এসেছে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’’ ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছেন বিরোধীরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ১৬টি মোটর সাইকেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৩০টি তাজা বোমা। ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় এক মহিলা-সহ ছ’জন জখম হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।