100 Days Work

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ‘এগিয়ে বাংলা’ কেমন করে শূন্যে? লোকসভার পরে রাজ্যসভায় জবাব কেন্দ্রের

একশো দিনের কাজ নিয়ে বিতর্ক থামছে। টানা তিন বছর বাংলার প্রাপ্তি শূন্য। অতীতের বকেয়া টাকার পরিমাণও বিপুল। কিন্তু কেন পাচ্ছে না রাজ্য? লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও জবাব কেন্দ্রের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৮
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

বাংলার জন্য একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কেন্দ্র যে টাকা দিচ্ছে না, তা নিয়ে রবিবার নতুন করে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে রাজ্যসভায় জমা পড়া রিপোর্ট তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ২০২১ সাল পর্যন্ত এগিয়ে থাকা বাংলা কী ভাবে পরের বছরগুলিতে পিছিয়ে পড়েছে। কেন্দ্র যে এই প্রকল্পে বাংলাকে টাকা দিচ্ছে না, তা কেন্দ্রের তরফে লোকসভায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেরেক।

Advertisement

ডেরেকের পোস্ট করা রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে শেষ পাঁচটি অর্থবর্ষে দেশের কোন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কত মানুষ একশো দিনের কাজ পেয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১০-২০ অর্থবর্ষে বাংলায় শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৩,৬৫,৬৮৩। সেটা পরের অর্থবর্ষে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬,৭৮,৬৩৩। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সেটা অনেকটা কমে হয়ে যায় ৪,৭১,১৩৬ আর ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে হয় মাত্র ১,৬১৮। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে দেখা যাচ্ছে বাংলার এক জন শ্রমিকও একশো দিনের কাজ পাননি। এই রিপোর্ট দেখিয়ে ডেরেকের দাবি, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির স্বপ্নপূরণ না হওয়ার পর থেকেই বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘‘তৃণমূল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এর ফলে প্রমাণ করা যাবে যে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখানে সেই বঞ্চনার প্রমাণ রয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবর্ষেও যে বাংলার জন্য একশো দিনের কাজ প্রকল্পে একটি টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি, সে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাতে দেখা গিয়েছিল, এ নিয়ে টানা তিনটি অর্থবর্ষেই এই প্রকল্প খাতে বাংলার জন্য বরাদ্দ শূন্য। তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পরে প্রথম লোকসভা অধিবেশনেই একশো দিনের কাজের বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। একত্রে লিখিত প্রশ্ন জমা দেন দলের সাংসদ সৌগত রায়, খলিলুর রহমান, মালা রায় এবং দেব। সেই সঙ্গে ওই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন কেরলের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্যসচেতক কদিকুন্নিল সুরেশ। মূল প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার কি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো আরও রাজ্যের এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে? গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী লিখিত জবাবে উল্লেখ করেন, কেরল নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গের টাকাই আটকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১-’২২, ২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের টাকা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যের পাওনা নেই। ২০২১-’২২ থেকে ২০২৫ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত বরাদ্দের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার জন্য পর পর তিনটি অর্থবর্ষে একটি টাকাও বরাদ্দ হয়নি। শেষ বার ২০২১-’২২ সালে বরাদ্দ হয়েছিল ৭,৫০৭.৮ কোটি টাকা।

Advertisement

সেই সঙ্গে কেন্দ্রের পক্ষে এটাও উল্লেখ করা হয় যে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে বাংলাকে কেন্দ্র ওই প্রকল্প বাবদ ৪,১৩৭ কোটি টাকা এবং পরের অর্থবর্ষে ১,৪১৬ কোটি টাকা দেয়। এর পরে টাকা দেওয়া বন্ধ হয় ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে। তার কারণ হিসাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মানার জন্যই বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের জন্য তৈরি ২০০৫ সালের আইনের ২৭ ধারায় এ ভাবে টাকা আটকে দেওয়ার সংস্থান রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষে বারংবার দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরই বিজেপি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হয়ে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। এ বারেও একই অভিযোগ করেছেন ডেরেক। জবাবে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আগেও বলেছি, আবারও বলছি, কেউ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়াকে ‘অধিকার’ এবং হিসাব না দেওয়াটা ‘অভ্যাস’ বলে মনে করলে, তা চলতে দেওয়া যেতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement